ছবি : ব্লুমবার্গ

যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস মঙ্গলবার ব্রিটেনের রাজা ৩য় চার্লসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লন্ডনে রাজপরিবারের প্রধান কার্যালয় বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগে দেশটির রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী বাকিংহাম প্যালেসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে শেষ ভাষণ দেন তিনি।

ভাষণে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা এই কনজারভেটিভ নেত্রী বলেন, ‘এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আমার জন্য খুবই সম্মানের একটি ব্যাপার ছিল। এমন এক ঐতিহাসিক সময়ে আমি এই দায়িত্বে এসেছিলাম, যখন নিজের ৭০ বছর শাসনের মেয়াদ শেষ করে মহামান্য রানি প্রয়াত হয়েছেন এবং রাজা ৩য় চার্লস দেশের সিংহাসনে আসীন হয়েছেন।’

‘আমার নেতৃত্বাধীন সরকার খুবই স্বল্প সময় ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমার চেষ্টা করেছি এমন একটি অর্থনীতি গ্রহণ করতে, যা দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করবে।’

‘বিদ্যুৎ বাড়তি দাম যেন লাখ লাখ পরিবারের ওপর বোঝার মতো চেপে না বসে, আমরা সেজন্য চেষ্টা করেছি। এছাড়া হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া হওয়া থেকে উদ্ধারেও যথাসাধ্য করেছি আমরা।’

রাশিয়া ও তার মিত্রদের নাম উল্লেখ না করে তাদের ‘অশুভ বিদেশি শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আজ অশুভ বিদেশি শক্তির কারণে আন্তর্জাতিক জ্বলানির বাজার অস্থিতিশীল। আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়েছে। আমরা জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে চেয়েছিলাম এবং আমি বলতে পারি যে—আমি যে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছি, সেই সরকারের সংকট মোকাবিলার মতো সৎসাহস ছিল।’

‘আমরা এমন একটি দেশ কখনও চাই না, যার প্রবৃদ্ধি থাকবে নিম্ন এবং বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র বিভাজন থাকবে। ব্রেক্সিটের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং দেশের সবকিছু ঢেলে সাজাতে আমাদের এই স্বাধীনতার সুবিধা নেওয়া প্রয়োজন।’

‘তার অর্থ আমাদের নাগরিকদের আরও স্বাধীনতা দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। নাগরিকদের স্বাধীনতার অর্থ করের হার নিম্ন রাখা—যেন তাদের উপার্জিত অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের নিজেদের হাতে থাকতেদ পারে; এবং চাকরির নিরাপত্তা, উচ্চ বেতন এবং আমাদের শিশু ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যা যা প্রয়োজন— সবই তার সঙ্গে সংযুক্ত।’

‘আমার মেয়াদে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, পাশে থেকেছেন তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। নতুন প্রধানমন্ত্রীকেও আমি স্বাগত জানাই। এখন থেকে আমি আমার নিজের সাংবিধানিক আসনে বেশি সময়ে দেব এবং যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেই সরকারকে সমর্থন ও যথাসাধ্য সহায়তা করব।’

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতার পদে আসীন হয়েছিলেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যেই অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর টরি এমপিদের বিদ্রোহের মুখে প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

দেশটির ইতিহাসে এর চেয়ে কম সময় (মাত্র ১১৯ দিন) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন জর্জ ক্যানিং। ১৮২৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১১৯ দিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের স্বল্প সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড ছিল তার। কিন্তু পদত্যাগ করায় এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার রেকর্ড গড়লেন লিজ ট্রাস।

এসএমডব্লিউ