ইউক্রেনে যে ধরনের রাশিয়ান অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই একই অস্ত্র মিয়ানমারেও মানুষ হত্যা করছে। এই হত্যা রোধ এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ তৈরি করতে, ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের পর যেভাবে জোট গঠন করেছে দেশগুলো; ঠিক একই ধরনের পদক্ষেপ মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ।

বুধবার জাতিসংঘের নিযুক্ত মিয়ানমার মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম এন্ড্রুস এই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানানো উচিত।

নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেছেন, ইউক্রেনে মানুষকে হত্যা করতে যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই একই ধরনের অস্ত্রের মাধ্যমে মিয়ানমারে লোকজনকে হত্যা করা হচ্ছে। আর এসব অস্ত্র আসছে একেবারে একই উৎস থেকে— অস্ত্রগুলো রাশিয়া থেকে আসছে।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরে তা বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করা উচিত।’

‌‘এটা এখন করা হচ্ছে না। আর এটি এ কারণে নয় যে, আমরা জানি না কীভাবে তা করতে হয়। আমরা জানি এটি কীভাবে করতে হয়। আপনি যদি কোনও প্লেবুক চান, তাহলে ইউক্রেনের দিকে তাকান।’

মিয়ানমারে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ অস্ত্র সরবরাহ করে, তার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। প্রত্যেক বছর দেশটি থেকে মিয়ানমারে অস্ত্রের বড় চালান আসে। গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সরকারকে রক্ষায় যে অল্প কয়েকটি দেশ ভূমিকা রাখছে, তার মধ্যে রাশিয়াও আছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে সামরিক জান্তা সরকার। দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

গত রোববারও দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে এক কনসার্টে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ৮০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কাচিন জনগোষ্ঠীর প্রখ্যাত শিল্পী এবং গায়করাও রয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। কাচিনে জান্তা বাহিনীর এই হামলার পর চলতি সপ্তাহে দেশটিতে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে এন্ড্রুস বলেছেন, এই ভয়াবহতার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার ধরন পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব। আমার কাছে কোনও প্রশ্নই নেই। এখানে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বেরও শূন্যতা রয়েছে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের কয়েকশ নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় মালয়েশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন এন্ড্রুস। তিনি বলেছেন, আমার মতে দেশে ফেরা এসব মানুষ নির্যাতন-নিপীড়ন, সম্ভবত মৃত্যুর মুখোমুখি হবে। তবে এই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেনি।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেছেন, এটি ভয়ানক। এটি অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

এসএস