করোনা মহামারির মধ্যে ব্যক্তিগত কারণে মালয়েশিয়ার উপমন্ত্রী এডমুন্ড সানথারার (৪৯) নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন করোনা প্রতিরোধে দেশটির সরকারি টাস্কফোর্সের মুখপাত্র ক্রিস বিশপ(৩৭)।

নিউজিল্যান্ড সফরে এসে সানথারা আদৌ আইসোলেশনে ছিলেন কিনা এবং থাকলেও কোথায় ছিলেন, তা জানতে চেয়েছেন বিশপ।

তবে এক বিবৃতিতে এডমুন্ড সানথারা জানিয়েছেন, তিনি নিয়ম মেনেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছেন এবং সেখানে গিয়েও যথাযথভাবে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম অনুসরণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমগুলোকে বিশপ বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি (এডমুন্ড সানথারা) কোনও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ব্যাতিরেকে কীভাবে নিউজিল্যান্ডে এলেন এবং আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করলেন। কারণ আগামী মার্চ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার পরিপূর্ণ এবং  নতুন কোন রোগী বা ব্যক্তির সেখানে প্রবেশের সুযোগ নেই।’

‘আমরা জানি, তিনি একটি দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; কিন্তু নিউজিল্যান্ডের জনগণ জানতে চায়, নিউজিল্যান্ডে প্রবেশের পর তিনি কোথায় আইসোলেশনে ছিলেন। সরকারি কোয়ারেন্টাইনে উপস্থিতদের তালিকায় তার নাম নেই।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা মোকাবিলায় অনেকটাই সফল নিউজিল্যান্ড। গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তখন  কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন, ব্যাপকমাত্রায় টেস্ট, কনট্যাক্ট ট্রেসিং ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগে সংক্রমণ ও মৃত্যু শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পেরেছিল নিউজিল্যান্ড।

তবে সম্প্রতি দেশটিতে ফের করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় আবারও কঠোর বিধিনিষেধের পথ অবলম্বন করছে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অর্ডানের নেতৃত্বাধীন সরকার। এবার দেশটিতে ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর অকল্যান্ডে লকডাউন জারি করেছে দেশটির সরকার, বন্ধ করা হয়েছে বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগও।

এদিকে এই লকডাউন, বিধিনিষেধ ও ফ্লাইট স্থগিতের কারণে নিউজিল্যান্ডের যেসব নাগরিক অন্যান্য দেশ থেকে নিজেদের দেশে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, তারাও সমস্যায় পড়েছেন।

বিশপ বলেন, ‘ব্যক্তিগত গোপনীতার ব্যাপারটা আমি বুঝি, তবে এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। রিকার্ডো মেনডেজ মার্চ (নিউজিল্যান্ডের একজন এমপি) সম্প্রতি মেক্সিকোতে গিয়েছিলেন। তিনি কবে সেখানে গিয়েছিলেন, কবে ফিরে এসেছেন এবং ফিরে আসার পর কোথায় আইসোলেশনে ছিলেন- সব হালনাগাদ তথ্য আমাদের কাছে আছে।’

‘তাই ব্যাক্তিগত গোপনীতা রক্ষার অজুহাত এখানে খাটানো উচিত নয়।’

তবে নিউজিল্যান্ডের কোভিড টাস্কফোর্সের মুখপাত্রের সমালোচনার জবাবে সম্প্রতি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন এডমুন্ড সানথারা। সেখানে তিনি বলেন, তার স্ত্রী অসুস্থ। স্ত্রীকে দেখতে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের কাছ থেকে ৫৫ দিনের ছুটি নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানোর পর ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তিনি।

তাকে নিয়ে হয়রানিমূলক প্রতিবেদন করা হলে আইনগত সহায়তা নিতে বাধ্য হবেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে সানথারা বলেন, ‘একজন উপমন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে আমি সবসময় নিয়মনীতি মেনে কাজ করেছি এবং কখনো কোনও অন্যায় সুবিধা নেইনি। আমি খুব ভালো করেই জানি, আইন সবার জন্য সমান।’

এসএমডব্লিউ