উত্তর কোরিয়া আবারও তাদের উপকূল থেকে অন্তত একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে। বুধবার কোরীয় উপকূলে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে দক্ষিণের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে।

জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনী বলেছে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পর সমুদ্রে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা সাংবাদিকদের বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে ২৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, জাপানের সরকার এই বিষয়ে বেইজিংয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্তর কোরিয়ার কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সিউলের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ (জেসিএস) বলেছেন, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে একটি অজ্ঞাত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার জলসীমার কাছে উত্তর কোরিয়ার স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (এসআরবিএম) অংশ অবতরণ করে। এবারই প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ার জলসীমায় গিয়ে পড়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ৩ মিটার দীর্ঘ এবং ২ মিটার চওড়া টুকরাটি বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এসএ-৫ এর একটি অংশ।

সেই সময় উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের তীব্র নিন্দা জানায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এই পরীক্ষাকে ২০১৮ সালে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী যেকোনো ধরনের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে স্বাক্ষরিত আন্তঃকোরীয় সামরিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে সিউল।

এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, উত্তর কোরিয়ার এসএ-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ স্পষ্টভাবে ইচ্ছাকৃত উসকানি। এসআরবিএমটি সোভিয়েত আমলে তৈরি এসএ-ফাইভ সার্ফেস-টু-এয়ার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। আট মাসের বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধেও একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর একটি ডুবো জাহাজ সমুদ্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উদ্ধার করেছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিমান মহড়ার প্রতিবাদে ব্যর্থ আন্তঃমহাদেশীয় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ (আইসিবিএম) একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছিল উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা কোরীয় সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ থেকে ৫ নভেম্বর ৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। শত্রুপক্ষের সম্মিলিত মহড়া মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ার বিমানবাহিনীর ৫০০ যোদ্ধাও মহড়া পরিচালনা করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার মহড়া ছিল পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘উন্মুক্ত উসকানি’। ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর লক্ষ্যে’ উচ্চ-আক্রমণাত্মক ধাঁচের বিপজ্জনক এই যুদ্ধ মহড়া চালিয়েছে ওয়াশিংটন এবং সিউল।

পিয়ংইয়ংয়ের ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ফলে ২০১৭ সালের পর দেশটি আবারও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস