দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ তুরস্ক কয়েক বছর ধরে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী আলাদা স্থান করে নিয়েছে। দিন দিন দেশটির অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ কিনছে তাদের অস্ত্র। আর তুরস্কের অস্ত্র কেনার দিক দিয়ে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশ।

আফ্রিকার দেশগুলোতে সরবরাহ করতে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র তৈরি করেছে তুরস্ক। তাদের কাছ থেকে ড্রোন, যুদ্ধ হেলিকপ্টার, টার্বোপ্রপ বিমান কেনার অর্ডার দিয়েছে মহাদেশটির বেশকিছু দেশ। বিশ্বের অন্যান্য অস্ত্র উৎপাদনকারীদের অস্ত্র না কিনে সাহারা মরুভূমির দেশগুলো কেন তুরস্কের দিকে ঝুঁকছে?

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিরাপদ, সাশ্রয়ীসহ ‘বেশ কয়েকটি কারণে’ তুরস্কের যুদ্ধাস্ত্র কেনার প্রতি আফ্রিকার দেশগুলোর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে তুরস্কের ড্রোন এসব দেশের নজরে পড়েছে। কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে তুরস্কের তৈরি ড্রোন সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে।

যুদ্ধাস্ত্র বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘নিউজলাইন ইনস্টিটিউট স্ট্র্যাটেজি এন্ড ইনোভেশনের’ পরিচালক নিকোলাস হেরাস বলেছেন, আফ্রিকার ক্রেতারা তুরস্কের ড্রোন চাচ্ছে কারণ এসব ড্রোন ‘রুক্ষ, সহজে চালানো যায়, রক্ষণাবেক্ষণও সহজ এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংঘাতে ব্যবহার করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘রাশিয়ার মতো পরাশক্তির আকাশ প্রতিরক্ষার বিরুদ্ধে হয়ত তুরস্কের ড্রোন এতটা কার্যকর না। কিন্তু ক্রেতা দেশগুলো আসলে এটা দেখছে না।’

অন্যদিকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবনে খালদুন সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর আলী বাকির মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, ‘আফ্রিকায় হঠাৎ করে তুরস্কের সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ আছে— কম দাম, উচ্চ কার্যকারিতা, তাছাড়া সত্যিকারের যুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিষয় তুরস্কের অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। এরমধ্যে আরেকটি অদৃশ্য কারণ আছে— তুরস্কের কোনো ঔপনিবেশিক ইতিহাস নেই, যা তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যে জড়িত হতে আফ্রিকার দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করে।’

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর আলী বাকির আরও জানিয়েছেন, পরিমাণ, দাম, গুণমান বিবেচনা করলে আফ্রিকায় তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানির বিষয়টি পুরোপুরি অভাবনীয়।

অস্ত্র বিশেষজ্ঞ নিকোলাস হেরাস বলেছেন, ‘আফ্রিকাকে তুরস্কের প্রধান বাণিজ্যক্ষেত্র তৈরিতে দেশটির কূটনীতিকরা গত কয়েক বছরে অনেক পরিশ্রম করেছেন। এখন এটির ফলাফলই পাচ্ছেন তারা।’ তার মতে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর অস্ত্র তৈরিতে দক্ষতা দেখিয়েছে। এটিও তুরস্কের অস্ত্র শিল্পে বড় অবদান রেখেছে।

তিনি জানিয়েছেন, আফ্রিকায় তুরস্কের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো— আফ্রিকার দেশগুলোর কাছে কোনে শর্ত দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে না তুরস্ক। এ ব্যাপারে এ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, `মানবাধিকারের সুতোয় বেঁধে তুরস্কের অস্ত্র আসে না। আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশগুলো চায়:  টেকসই, যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত অস্ত্র। যেগুলো দ্রুত আসে কোনো লাল টেপ (শর্ত) ছাড়া।

এদিকে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া তার্কিস এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (টিএআই) কাছে ১০টি আঙ্কা-এস যুদ্ধড্রোন কেনার চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছে। এক বছর আগে আলজেরিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ও প্রতিবেশী মরক্কো তুরস্কের অত্যাধুনিক ১৩টি বায়রেকতার টিবি২ ড্রোন কেনার চুক্তি করেছিল।

২০২১ সালে প্রথম দেশ হিসেবে আফ্রিকার নাইজার তুরস্ক থেকে হুকুস টার্বোটপ বিমান/হালকা যুদ্ধবিমান কেনার অর্ডার দেয়। এরপর চাঁদ এবং লিবিয়াও একই বিমান কিনতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা আফ্রিকার আরও দেশ তাদের বিমান কিনবে।

২০২১ সালেই নাইজেরিয়া তাদের নৌবাহিনীর জন্য তুরস্কের তৈরি ডিয়াসান সমুদ্র জাহাজ কেনে। এরপর তারা তুরস্কের কাছে ছয়টি টিএআই টি১২৯ হেলিকপ্টারের অর্ডার দেয়। আফ্রিকার আরেক দেশ ইথিওপিয়া ২০২১ সালের দিকে তুরস্কের বায়রেকতার টিবি-২ ড্রোন কেনে। যেগুলো তাইগ্রে যুদ্ধে ব্যবহার করেছে তারা। আফ্রিকার অন্তত ১০টি দেশ তুরস্কের সেনাযান কেনার চুক্তি করেছে।

সূত্র: মিডল ইস্ট আই

এমটিআই