রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের তৈরি আত্মঘাতী কামিকাজে ড্রোন দিয়ে গত দুই মাসে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। তারা এতে সফলতাও পেয়েছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে সরাসরি ইরান থেকে এসব ড্রোন এনেছিল রাশিয়া।

আর এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন আর ইরান থেকে ড্রোন আনবে না রাশিয়া। এর বদলে তেহরানের কারিগরি সহায়তা নিয়ে নিজ দেশেই ড্রোন তৈরি করবে তারা। এ নিয়ে নভেম্বরের শুরুতে ইরানের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তিও করেছে মস্কো।

ওয়াশিংটন পোস্ট আরও জানিয়েছে, বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মস্কোতে ড্রোন উৎপাদন শুরু করতে কাজ শুরু করেছে রাশিয়া। সবকিছুই খুব দ্রুত করা হচ্ছে।

এদিকে এ চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া-ইরানের মধ্যে গভীর সম্পর্কের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যেন সাফল্য পায় সেটি নিশ্চিতে ইতিমধ্যে অনেক অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে ইরান।

বিষয়টি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজ দেশে ড্রোন উৎপাদন করে রাশিয়া তাদের অস্ত্র শক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে পারবে। ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এসব ড্রোনের দাম অনেক কম। এছাড়া এগুলোর কার্যকারীতাও ভালো। ইরানের এসব ড্রোন বিস্ফোরক বহন করে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুর কাছে গিয়ে আছড়ে পড়ে। ড্রোনে থাকা বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দেয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট থেকে ইউক্রেনে ৪০০ ড্রোন মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। যেগুলোর বেশিরভাগই বেসামরিক ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালাতে ব্যবহার করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাক্কা খাওয়ার পর ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার দিকে নজর দেয় রুশ সেনারা।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, রাশিয়ার জন্য এ চুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নয় মাস যুদ্ধ করার কারণে তাদের নির্ভুল আঘাত হানার অস্ত্র কমে এসেছে। এখন নিজ দেশে ড্রোন উৎপাদন করতে পারলে সেগুলো পূরণ করতে পারবে তারা।

অন্যদিকে রাশিয়াকে ড্রোন দেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ফলে ইরান ভাবছে— যদি রাশিয়া নিজ দেশেই ইরানের কারিগরি সহায়তা নিয়ে এসব ড্রোন উৎপাদন করে তাহলে তাদের নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার ঝুঁকি থাকবে না।

রাশিয়ায় ড্রোন তৈরির বিষয়টি নিয়ে অক্টোবরের শেষ দিকে আলোচনা শুরু করে দুই দেশ। এজন্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তেহরান গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

রাশিয়া-ইরানের গোপন চুক্তি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তবে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিন ওয়াটসন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরান ও রাশিয়া বিশ্বের কাছে মিথ্যা বলতে পারে। কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম বিশ্বের কাছ থেকে লুকাতে পারবে না; রাশিয়াকে তাদের অপারেশনে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ ইউক্রেনীয়দের হত্যায় সহযোগিতা করছে তেহরান। এটি নির্দেশ করে রাশিয়া ও  ইরান কতটা বিচ্ছিন্ন।’

এদিকে ইউক্রেন অনেক আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিল তাদের বিরুদ্ধে ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া। কিন্তু ইরান মস্কোকে ড্রোন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে তেহরান স্বীকার করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়াকে ড্রোন দিয়েছিল তারা।

এমটিআই