আনোয়ার ইব্রাহিম, ছবি : রয়টার্স

মালয়েশিয়ায় সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনের পর যে ‘ঝুলন্ত’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে নিজের সাবেক বৈরীদের সঙ্গে জোট করতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির এক সময়ের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পরে সবচেয়ে দীর্ঘকাল বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় থাকা রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিম।

ইতোমধ্যে নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল ইউনাইটেড মালয়েজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) নেতৃত্বাধীন জোট বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন বলেও সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আনোয়ার।

সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটি কার্যকর জোট সরকার গঠন করতে বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আজ (সোমবার) আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে (সরকারে আসার) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, জোটের অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

‘একটি স্থিতিশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে এই বৈঠকটি জরুরি ছিল। যদিও এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আমরা আসতে পারিনি, তবে আমি খুবই খুশি এবং সন্তুষ্ট যে, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটি প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে পেরেছি।’

শনিবার মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দেওয়ান রাকিয়াত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া বড় তিনটি জোট হলো আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী পাকাতান হারাপান কোয়ালিশন, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লক।

দেওয়ান রাকিয়াতের মোট আসন সংখ্যা ২২২টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করতে হলে বিজয়ী দল বা জোটকে রাকিয়াতের অন্তত ১১২টি আসনে জয়ী হতে হবে।

শনিবার ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাকাতান হারাপান কোয়ালিশন ৮২টি, পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লক ৭৩টি এবং বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদের চেয়ে বেশি আসন পাওয়া পাকাতান হারাপান ইউএমএনওর জোট বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের সঙ্গে সরকার গঠন করতে চাইছে।

ইউএনএমও মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজে এক সময় এই দলের বড় নেতা ছিলেন।

কিন্তু ১৯৯৮ সালে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির আদালত।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে ২০০৮ সালে নির্দোষ হিসেবে মুক্তিলাভ করেন আনোয়ার; রাজনীতি করার অধিকারও ফিরে পান তিনি। আপিলে প্রমাণিত হয়— তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।

কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করেন আনোয়ার এবং ইউএমএনওর সঙ্গেও তার রাজনৈতিক বৈরীতার শুরু সে সময় থেকেই। কারণ  তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পরই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল ইউএমএনও।

এবারের নির্বাচনে মুহিদ্দিন ইয়াসিনের জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লকের ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই। যদিও মালয়েশিয়ার ছোট ইসলামিক দল পেরিকাতানকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তাদের সমর্থন নিয়েও ৭৩ আসন পাওয়া পেরিকাতান জোটের মোট আসন হয় ১০১টি। আনোয়ার ইব্রাহিমও পেরিকাতান ব্লকের সঙ্গে বোঝাপড়ায় যেতে আগ্রহী নন।

এবারের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে কম আসন পেয়েছে ইউএমএনও। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিই তার প্রধান কারণ। রাষ্ট্রীয় তহবিল ওয়ান মালয়েশিয়া ফান্ড থেকে কোটি কোটি ডলার তছরুপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে করাগারে আছেন নাজিব।

এ কেলেঙ্কারির জেরে মালয়েশিয়ার জনগণের একটি বড় অংশ ইউএমএনও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সদ্য বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব বর্তমানে ইউএমএনওর শীর্ষ নেতা।

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন দেশটির রাজা। যদি পাকাতান হারাপান কোয়ালিশন ও বারিসানের মধ্যে ঐকমত্য হয়, সেক্ষেত্রে হিসেব অনুযায়ী আনোয়ার ইব্রাহিমেরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। তবে রাজা যদি চান, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অজর্নকারী জোটের অন্য কোনো নেতাকেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি।

রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেছেন রাজা।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএমডব্লিউ/এসএস