ফাইল ছবি

বিদেশ থেকে পাইলট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে ভারতের টাটা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন এয়ারলাইন্স এয়ার ইন্ডিয়া। বোয়িং-৭৭৭ মডেলের বিমানগুলোর জন্যই এয়ার ইন্ডিয়া অন্য দেশ থেকে পাইলট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাটা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া তার বোয়িং-৭৭৭ মডেলের প্লেনের জন্য অন্য দেশ থেকে পাইলট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। আকাশপথে সেবা দানকারী এই সংস্থাটি তার বহরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কর্মকাণ্ড আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে এবং এতে করে পাইলটের সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে সংস্থাটি।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের ফ্লাইট পরিষেবা সম্প্রসারণের চিন্তা করছে টাটা গোষ্ঠী। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের হাতে যে পরিমাণ পাইলট রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। আর সেই কারণেই শুরু হতে পারে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে পরিষেবা বাড়ানোর কথা মাথায় রেখেও বিদেশ থেকে চালক নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থায় আগে থেকেই পাইলটের ঘাটতি ছিল। আগামী চার মাসে সংস্থাটি ৫টি বোয়িং-৭৭৭ বিমান নতুন করে চালু করার ঘোষণা এবং যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্তের পরই বিদেশ থেকে পাইলট নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেশ কয়েকটি সূত্র ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, বিদেশ থেকে মোট ১০০ জন পাইলট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে এয়ার ইন্ডিয়া। আর এ লক্ষ্যে এয়ার ইন্ডিয়া ইতোমধ্যেই বিমান চালক সরবরাহকারী বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, ‘এয়ার ইন্ডিয়া ১০০ জন পাইলট চায়। যদিও তারা বলেছে, তারা ভারতীয় পাইলটদের অগ্রাধিকার দেবে, তারপরও সংস্থাটি বিদেশি পাইলট নিয়োগের জন্যও উন্মুক্ত। এছাড়া বিদেশি পাইলটরা একজন ভারতীয় পাইলট নিয়োগে হওয়া খরচের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি অর্থে এখানে কাজ করতে আসে। যদিও এটাও সত্য যে, ওয়াইড-বডি প্লেন চালাতে অভিজ্ঞ পাইলট দেশীয় (ভারতীয়) বাজারে সহজে পাওয়া যায় না।’

মূলত সাত বছর ধরে সরকারের মালিকাধীন থাকা এয়ার ইন্ডিয়া খরচ বাঁচাতে অন্য দেশ থেকে পাইলট নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিল। লোকসানের মুখেও পড়তে হয়েছিল এই বিমান সংস্থাকে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে টাটা গোষ্ঠী এই বিমান সংস্থার মালিকানা পাওয়ার পর বিমান সংস্থাটি আবার লাভের মুখে দেখতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, বিদেশি পাইলটদের বেতন ভারতীয় পাইলটদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আর তাই প্রায় ১০০ জন বিদেশি পাইলটের নিয়োগ সম্পন্ন হলে তাদের পেছনে প্রতি মাসে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে এয়ার ইন্ডিয়াকে। আর তাই ফ্লাইটের টিকিটের দামও বাড়তে পারে কিনা এখন সেই প্রশ্নও উঠছে।

গত শনিবার, এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যাম্পবেল উইলসন জানিয়েছিলেন, শেয়ার বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে এয়ার ইন্ডিয়া।

উল্লেখ্য, টাটা গোষ্ঠীর হাতে কিছুদিন আগেই হস্তান্তর করা হয় ভারতের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। তবে এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও এই গোষ্ঠী ভিস্তারা এবং এয়ার এশিয়ার বড় অংশীদার। প্রায় ৬৯ বছর পর টাটার অধীনে এয়ার ইন্ডিয়া আসাকে ঐতিহাসিক সাফল্য বলে দেখা হয়।

অবশ্য ১৯৩২ সালে টাটা গোষ্ঠীরই হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতের প্রথম বিমান সংস্থা টাটা এয়ারলাইন্সের। ভারতের প্রথম পাইলট জে আর ডি টাটা প্রতিষ্ঠিত সেই টাটা এয়ারলাইন্সের নাম বদলে ১৯৪৬ সালে হয় এয়ার ইন্ডিয়া (এআই)। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ১৯৫৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্তকরণের মাধ্যমে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা চলে যায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেনার ভারে জর্জরিত অবস্থায় ছিল এয়ার ইন্ডিয়া। আর এরই প্রেক্ষিতে এই বিমান সংস্থাকে টাটার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের পরদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে টাটা সন্স এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণ করে।

টিএম