ছবি : রয়টার্স

ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক ও দেশটির রাজপরিবারের কড়া সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড থেকে সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান দায়মুক্তি পেলেও এখনই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের মতো সহজ ও বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে না।

বরং মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ও তেলসমৃদ্ধ দেশটির সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটির সম্পর্ক কেমন হবে— তা এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্লিনকেন। সেখানে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে ব্লিনকেন বলেন, ‘এ ব্যাপারটি এখনও বিবেচনাধীনে রয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে সৌদি যুবরাজের বিভিন্ন নীতির কড়া সমালোচনা করা সাংবাদিক জামাল খাসোগি তার বাগদত্তা, তুর্কি নাগরিক হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে খুন হন।

পরে জানা যায়, তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই খুনের আদেশ স্বয়ং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দিয়েছেন বলে তাদের বিশ্বাস।

সিআইএর এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি সত্য যে খাসোগিকে এজেন্টরাই হত্যা করেছে, কিন্তু এই হত্যার নির্দেশ এসেছিল সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এতে বিশেষ করে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তি।

অবশ্য শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ  খাসোগি হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও পরে বলেছেন, তার অধীনে থাকা লোকজনই এ ঘটনার জন্য দায়ী।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যুবরাজের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, সেটি হেতিস চেঙ্গিস এবং খাসোগির প্রতিষ্ঠিত একটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে করেছে; মামলায় পশ্চিমা দেশগুলোতে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে অনির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

মামলার যুবরাজসহ আরও ২০ জনেরও অধিক সৌদি নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। এবং মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, খাসোগি তার মানবাধিকার সংস্থাকে সৌদি আরবে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন জানতে পেরে এমবিএস ও আসামির তালিকায় থাকা বাকিরা অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ‘খাসোগিকে চিরতরে চুপ করিয়ে দেওয়ার’ ছক কষেন।

তবে সম্প্রতি ওয়াশিংটন জানিয়েছে, মামলার আসামির তালিকা থেকে যুবরাজের নাম কেটে দেওয়া হবে। এ সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু মোহাম্মদ বিন সালমান এখন সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী, তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে তার বিচার সম্ভব নয়।

এসএমডব্লিউ