পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামো ও কর্মকাণ্ডে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রভাব অনেক বেশি। এমনকি রাজনৈতিক নানা ভূমিকায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বলেও দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কখনোই এ অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি।

অবশেষে নিজের বিদায় বেলায় দীর্ঘদিনের সেই গুপ্ত সত্যকেই স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রাজনীতিতে বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করবে না।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসাবে বুধবার শেষ ভাষণ দেন জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।

এদিনের ভাষণে সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রাজনীতিতে বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে বলে স্বীকার করলেও তিনি কার্যত পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কথা বলেছেন। যদিও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের ভেতরে সমালোচনার শিকার হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও সমালোচনা করে থাকেন। এমনকি গত এপ্রিলে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য সেনাবাহিনীকে তার ভূমিকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন ইমরান।

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দপ্তরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় ৬২ বছর বয়সী জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রতিবেশী ভারতের সেনাবাহিনী তাদের জনগণের সমালোচনার শিকার হয় না।

তিনি বলেন, ‘আমার মতে, এর কারণ হলো গত ৭০ বছর ধরে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ক্রমাগত হস্তক্ষেপ, যা অসাংবিধানিক। তাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে, সামরিক বাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’

তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনী তার ‘ক্যাথারসিস’ বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে বের হতে শুরু করেছে। আর এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোও ‘তাদের আচরণের আত্মবিশ্লেষণ করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘বাস্তবতা হলো- পাকিস্তানে সামরিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ সবাই ভুল করেছে। আর এটাই সময় আমাদের তাদের কাছ থেকে শেখার এবং এগিয়ে যাওয়ার।’

বাজওয়া পাকিস্তানের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং দেশের সকল অংশীদারকে তাদের অহংকার দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

৬২ বছর বয়সী এই জেনারেল ২০১৬ সাল থেকে ৬ লাখ সদস্যের শক্তিশালী পারমাণবিক সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৯ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছিলেন। আর সেই মেয়াদ শেষে আগামী মঙ্গলবার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

আগামী কয়েক দিনের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আল জাজিরা বলছে, মোটামুটি ১০ মিনিট স্থায়ী বুধবারের ওই বক্তৃতায় জেনারেল বাজওয়া রাজনীতির বিষয়ে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। একইসঙ্গে সামরিক বাহিনীর প্রতি নেতিবাচকতা এবং কঠোর সমালোচনার নিন্দাও জানান।

মূলত পাকিস্তানের অর্থনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনীর বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির বৈদেশিক বিষয়সহ জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে সামরিক বাহিনী। এছাড়া ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই আজ পর্যন্ত তার মেয়াদ পূর্ণ করেননি।

এছাড়া বুধবারের বক্তৃতায় বাজওয়া স্বীকার করেন যে, রাজনৈতিক দল এবং জনসাধারণ তাদের অধিকারের কারণেই সেনাবাহিনীর সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অমার্জিত শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন তিনি।

জেনারেল বাজওয়ার ভাষায়, ‘সবাইকে মনে রাখা উচিত, এই ধৈর্যের সীমা আছে। আমি আমার এবং সেনাবাহিনীর প্রতি এই আক্রমণাত্মক সমালোচনা উপেক্ষা করতে চাই। কারণ পাকিস্তান আমাদের সবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

টিএম