ছবি : রয়টার্স

কঠোর ‘জিরো কোভিড’ নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভের পর করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সব জেলা ও শহর থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া।

চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী সান চুনলান সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেন, ‘দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের ভয়াবহতাও অনেকটা কমে এসেছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে টিকাদান কর্মসূচির গতিও। শুরু থেকেই অন্যান্যদের চেয়ে অনেক পরিকল্পিতভাবে আমরা মহামারি মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম এবং এখন আমরা এই মোকাবিলার নতুন পৌঁছেছি।’

ইতোমধ্যে রাজধানী বেইজিং, বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাই, দক্ষিণাঞ্চলীয় বাণিজ্যকেন্দ্র গুয়াংডং, চংকিং, ঝেংঝৌসহ চীনের সব এলাকায় লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। গুয়াংডংয়ে অবশ্য বুধবারেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল।

এছাড়া আরও কিছু ব্যাপারে শিথিলতা এনেছে দেশটির সরকার। যেমন— আগে কোনো একটি আবাসিক ভবনে একজন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হলে পুরো ভবন লকডাউন করা হতো। তবে সরকারি বৃহস্পতিবার সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো ভবনের কোনো বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হলে কেবল তিনিই আইসোলেশনে থাকবেন, ভবন আর লকডাউন করা হবে না।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

মহামারির শুরু থেকেই করোনার বিস্তার রোধ করতে মাসের পর মাস লকডাউন, কোরেন্টাইন ও ভ্রমণবিধি, বাধ্যতামূলক করোনা টেস্টসহ বিভিন্ন কঠোর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ-মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকার। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে চীনে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর হার এখনও অনেক কম।

কিন্তু সরকারের এই কঠোর ‘জিরো কোভিড’ নীতিতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন দেশটির সাধারণ মানুষ। মাসের পর মাস লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন জারি থাকায় দেশটির অনেক শ্রমজীবী তাদের আয়ের সংস্থান যেমন হারিয়েছেন, তেমনি বিদেশি অনেক কোম্পানি চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকি শহরে একটি বহুতল বাসভবনে আগুন লেগে ১০ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে বিলম্ব হয়েছে। যদি বিলম্ব না হতো, তাহলে এই নিহতের ঘটনা ঘটত না।

তারপর থেকেই চীনজুড়ে শুরু হয় লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ। সরকারের ‘জিরো কোভিড’ নীতি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে দেওয়া একের পর এক স্লোগানে রীতিমতো কেঁপে ওঠে বিভিন্ন শহর। অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে লকডাউনবিরোধী জনতার হাতাহাতি-সংঘর্ষও হয়।

চীনে এ ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ খুবই বিরল। মূলত সেই বিক্ষোভের পরই ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল দেশটির সরকার।

গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংজু’র সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক লিজিন হং বিবিসিকে বলেন, ‘নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের সবার মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে; কিন্তু এটা সত্য যে গুয়াংজুকে আবার পূর্বের অবস্থায় দেখতে পাওয়ার অভিজ্ঞতাটি হবে অসাধারণ।’

এসএমডব্লিউ