ইরানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মারা যান কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনী। হিজাব পরিধানের বিধান লঙ্ঘন করায় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের এ বিশেষ শাখার সদস্যরা। ইরানি নারীরা যেন হিজাব এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরেন সেটি নিশ্চিতে নৈতিকতা পুলিশ তৈরি করা হয়।  

মাহসা আমিনী মারা যাওয়ার পর হিজাব বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ইরানে। বিক্ষোভকারীরা নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তির দাবি জানাতে থাকেন।

এরই মধ্যে রোববার (৪ ডিসেম্বর) ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল জাফর মনতাজেরি জানান, নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

তবে আদৌ পুলিশের এ বিশেষ শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলোই জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি শহরে নৈতিকতা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মীয় শহরগুলোতে। এসব শহরের দোকানিদের বলা হয়েছে হিজাব যারা পরিধান করবেন না, তাদের যেন সেবা না দেওয়া হয়।

এরমধ্যে আধাসরকারি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তেহরানের একটি শপিং মলের বিনোদন পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই পার্কের কর্মীরা ঠিকমতো হিজাব পরিধান করেননি।

ইরানের প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যম হাম্মিহান দাবি করেছে, রাজধানী তেহরানের বাইরের শহরগুলোতে নিজেদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে নৈতিকতা পুলিশের সদস্যরা। এর আগের কয়েক সপ্তাহ তাদের কম দেখা গিয়েছিল।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকেও নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্তির তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। সার্বিয়া সফরে থাকা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিকভাবে ইরানে সবকিছু স্বাভাবিক চলছে।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে ইরানের একজন নারী অবশ্য জানিয়েছেন, গত আড়াই মাসে রাজধানী তেহরানে নৈতিকতা পুলিশের টহল বা অন্যকিছু তার চোখে পড়েনি। তেহরানে বসবাস করা এক নারী সাংবাদিক জানিয়েছেন, বর্তমানে বিক্ষোভ দমনে ব্যস্ত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। ফলে নারীরা হিজাব পরিধান করছেন কিনা, ঢিলেঢালা পোশাক পরছেন কিনা সেটি নিশ্চিত করার সুযোগ পাচ্ছে না তারা। এ কারণে হয়ত এখন নৈতিকতা পুলিশকে দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে ইরানের বিক্ষোভকারীরা সোমবার থেকে পুরো দেশে তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশটির প্রায় ৪০টি শহরের অনেক দোকানি তাদের দোকান বন্ধ রাখেন। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হননি বেশিরভাগ লরি চালক।

মাহসা আমিনীর মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে সরকারি হিসেবেই ২০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে তা চারশরও বেশি। প্রায় এগারো সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের তীব্রতা এখন কিছুটা কমে এসেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এমটিআই