চলতি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের আগে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানি যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে তবেই আমরা পানিবন্টনে রাজি হবো। তিস্তার পানিতে পশ্চিমবঙ্গের ‘হিস্সা’ অর্থাৎ ভাগ আছে। সেই ভাগ পশ্চিমবঙ্গ কোনোভাবেই ছাড়বে না।‘ অর্থাৎ ভোটের মুখে তার আগের অবস্থানের কথাই আবার জানালেন মমতা।

মোদি ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো মমতা চুক্তিতে রাজি হননি। ফলে শেষপর্যন্ত তিস্তা চুক্তি করা যায়নি। 

ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো মমতা সেই চুক্তিতে রাজি হননি। ফলে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা যায়নি। বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের সঙ্গে যে কোনো আলোচনায় তিস্তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে।

ভারত-বাংলাদেশ সর্বশেষ ভার্চুয়াল বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির কাছে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চ মোদি ঢাকায় গেলে ফের এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তার আগে মমতার এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে মমতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এ মন্তব্য করেছেন। বিগত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে বিজেপি অত্যন্ত ভালো ফল করেছিল। মমতা বিজেপির সেই ভোট নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য উত্তরের শিলিগুড়িতে তিস্তা বিতর্ক নতুন করে তুলে দিলেন।

বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের সঙ্গে যে কোনো আলোচনায় তিস্তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। কিন্তু ভারতের কারণে এখন পর্যন্ত চুক্তিটি করা যায়নি।

এমন মন্তব্য করে অঞ্চলটির একাংশের মানুষের বাহবা পাবেন মমতা। এছাড়াও তিস্তার পানি নিয়ে মোদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কথা ভাববেন। তিস্তা চুক্তি হলে অঞ্চলটির মানুষ যে তা ভালো ভাবে নেবেন না, মোদি তা ভালোই জানেন। মমতা সেই সুযোগটা রাজনীতির দিকে থেকে কাজে লাগাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তার পানিবন্টনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি সঙ্গত। ভারত যেভাবে চুক্তিটি ঝুলিয়ে রেখেছে, তা ঠিক নয়। আবার এও ঠিক, পানিবন্টন হলে, পশ্চিমবঙ্গের একাংশের মানুষ সমস্যায় পড়বেন। তারা তিস্তার পানির ওপরই নির্ভরশীল এবং সে কারণে প্রথম থেকেই মমতা এর বিরোধিতা করছেন। উল্লেখ্য, গ্রীস্মকালে তিস্তায় পানির পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।

ভারতের আইন অনুযায়ী, নদীর পানিবন্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারই শেষ কথা বলে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে ফেললে পশ্চিমবঙ্গের কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিপুল দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। সেই দ্বন্দ্ব এড়াতেই মনমোহন সিং শেষ পর্যন্ত চুক্তি করতে পারেননি।

মোদিও পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি উপেক্ষা করে চুক্তি করেননি। পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখে মোদি কী করেন, সেটাই এখন দেখার। এদিকে বাংলাদেশও তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে ভারতও খুব বেশিদিন বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখতে পারবে না।

মমতা এই সময় তিস্তা প্রসঙ্গ তুলে বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তি সম্ভবত হয়ে যাবে। তাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের অসুবিধা হবে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে উত্তরবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন। সেজন্যই ভোটের মুখে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি। আগামী ২৭ মার্চ থেকে ভোট শুরু হচ্ছে। 

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এএস