দেশজুড়ে চলমান সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা চালানোর দায়ে প্রথম একজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোহসেন শেকারি নামের ওই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোহসেন শেকারির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

তাকে দাঙ্গাবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেহরানের প্রধান একটি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে ইরানের আধা-সামরিক বাহিনী বাসিজের একজন সদস্যের ওপর ছুরি হামলা চালিয়েছিলেন মোহসেন। এতে বাসিজের ওই সদস্য গুরুতর আহত হন।

দেশটির একজন আন্দোলনকারী বলেছেন, কোনও যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই লোক দেখানো বিচারের মাধ্যমে মোহসেনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম এক টুইটে বলেছেন, ইরানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত বাস্তব প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি না হলে প্রত্যেক দিনই বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করবে তেহরান।

হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনি মারা যান। পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে দেশটিতে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভ এখন সরকার-বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ইরানের বিচারবিভাগ এখন পর্যন্ত ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে।

নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৬০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের এবারই প্রথম ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

তবে ইরানের সরকার এই বিক্ষোভকারীদেরকে ‘দাঙ্গাবাজ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, বিদেশি শত্রুদের ইন্ধনে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে।

এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সরকার স্বীকার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, হিজাববিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) অনুযায়ী, ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৭৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং ১৮ হাজার ২৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর ৬১ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

চলমান বিক্ষোভ সামলাতে গত রোববার ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরি বিতর্কিত নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দেশটির বিক্ষোভকারীরা নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এখনও কিছু কিছু শহরে পুলিশের বিশেষ এই শাখার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। 

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসএস