জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে ভাসছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ওই নৌকার অনেকে মারা গেছেন। জীবিতদের উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের সহিংসতা ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে প্রত্যেক বছর শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় চেপে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। শিবিরের ক্রমবর্ধমান অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারে গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিপজ্জনক এই যাত্রার চেষ্টাকারীর সংখ্যা বেড়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী নৌকাটি গত নভেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় রানোং উপকূলে পৌঁছানোর পর নৌকাটি ফুটো হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিওয়া।

আরকান প্রজেক্টের এই কর্মকর্তা নৌকায় চেপে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘(রোহিঙ্গাদের) নৌকায় খাবার ও পানি প্রায় ফুরিয়ে গেছে। পুরুষরা মরিয়া হয়ে নৌকা থেকে পানি অপসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

ক্রিস লিওয়া বলেন, নৌকার আরোহীরা বলেছেন, তারা থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর একটি নৌকা দেখেছেন। কিন্তু নৌবাহিনীর সদস্যরা সাগরে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নৌকাটি থাইল্যান্ডের জলসীমায় প্রবেশ করেনি। বর্তমানে নৌকাটি ভারতের জলসীমায় রয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের এই কর্মকর্তা।

রয়টার্স বলছে, নৌকাটির অবস্থান এখনও অস্পষ্ট রয়েছে। ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা একটি নৌকায় লোকজনের আটকা পড়ার তথ্য পেয়েছেন। তবে নৌকাটি ভারতীয় জলসীমার ভেতরে নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বর্তমানে সেটি কোথায় অবস্থান করছে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

থাইল্যান্ড-ভিত্তিক রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী সিয়েদ আলম নৌকায় ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কয়েকজন যাত্রী মারা গেছেন। তবে তার এই দাবি রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।

সিয়েদ আলম বলেছেন, তাদের (নৌকায় আটকা রোহিঙ্গাদের) অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। (তারা) দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদি সাহায্য করা না হয়, তাহলে সবাই মারা যাবে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, চলতি বছর মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাকারী মানুষের সংখ্যায় ‘নাটকীয় বৃদ্ধি’ দেখা গেছে। এ বছর বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী এই জলপথ কমপক্ষে ১ হাজার ৯০০ জন পাড়ি দিয়েছেন। যা ২০২০ সালের তুলনায় ছয়গুণেরও বেশি।

সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছর বিপজ্জনক এই যাত্রাপথে চেষ্টার সময় অন্তত ১১৯ জন মারা গেছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস