তালেবান ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো দোষী সাব্যস্ত এক খুনির মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে কার্যকর করার একদিন পর আফগানিস্তানে এবার নারীসহ অন্তত ২৭ জনকে জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকরে তাদের এই শাস্তি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে তালেবান।

জনসম্মুখে লোকজনকে বেত্রাঘাতের সাজার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে ‘ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব’ বলে অভিহিত করেছেন তালেবানের প্রধান মুখপাত্র। অতীতের তুলনায় এবারে তুলনামূলক কম কঠোর আইনের মাধ্যমে দেশ শাসন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান।

কিন্তু গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে এই গোষ্ঠী নানা ধরনের ইসলামিক বা শরিয়া আইন পুনরায় চালু করেছে। সরকারি চাকরি ও স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম থেকে মেয়েদের বিরত থাকারও নির্দেশ দিয়েছে দেশটির এই শাসকগোষ্ঠী।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, সমালোচনায় বহিরাগতরা যে ‘মুসলমানদের বিশ্বাস, আইন এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না’ সেটি ফুটে উঠছে।

এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরের পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকরে ২৭ অপরাধীকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সমকামিতা, প্রতারণা, জাল সাক্ষ্য, জালিয়াতি, ট্যাবলেট-কে (মাদক) কেনাবেচা, বাড়ি থেকে পলায়ন, মহাসড়কে ডাকাতি এবং অবৈধ সম্পর্কসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের দায়ে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই অপরাধীদের মধ্যে ৯ জন নারীও রয়েছেন। 

‘কোনও ধরনের বলপ্রয়োগ ছাড়াই অপরাধীদের প্রত্যেকেই আদালতের সামনে অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং জনসম্মুখে শাস্তিও মেনে নিয়েছেন তারা।’

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পারওয়ানের একটি স্টেডিয়ামে বেত্রাঘাত করার সময় এক হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অপরাধীদের সাজা প্রত্যক্ষ করার সময় জনসাধারণ ‘আল্লাহু আকবর’ এবং ‘আমরা আমাদের মাটিতে আল্লাহর আইন কার্যকর করতে চাই’ বলে স্লোগান দেন। 

তালেবানের একদল সদস্য অপরাধীদের প্রকাশ্যে গড়ে ২০ থেকে ৩৯ বার বেত্রাঘাত করেন। এ সময় তারা ব্যথায় তীব্র কান্না এবং চিৎকার করেন বলে জানিয়েছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী। আর এই কাজে প্রায় এক মিটার দীর্ঘ এবং চার আঙ্গুল চওড়া একটি বেত ব্যবহার করা হয়।

এসএস