বর্ষসেরা আবিষ্কারের স্বীকৃতি পেল পাকিস্তানের বৌদ্ধমন্দির
পাকিস্তানের বারিকোট শহরের সেই প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, ছবি : গালফ নিউজ
চলতি বছর পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া একটি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কারের ঘটনাকে ‘২০২২ সালের সেরা ১০টি পুরাকীর্তি আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম বলে স্বীকৃতি দিয়েছে প্রত্নতত্ব সংক্রান্ত বিশ্বসেরা সাময়িকী আর্কিওলজি ম্যাগাজিন।
আর্কিওলজিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকাভুক্ত জেলা গান্ধারার বারিকোটে চলতি বছর একটি খননকার্য অভিযান চালানো হয়েছিল। ইতালির ভেনিস শহরের কা’ফসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুকা মারিয়া অলিভিয়েরের নেতৃত্বে এই অভিযান অংশ নিয়েছে প্রাচ্য অঞলের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা সংস্থা ইন্টান্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর মেডিটেরেনিয়ান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (আইএসএমইও), খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক জাদুঘর এবং সোয়াত জাদুঘর।
বিজ্ঞাপন
নিবন্ধে বলা হয়, ‘সোয়াত উপত্যকার বারিকোট শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটি পৃথিবীতে এ যাবৎকালে সন্ধান পাওয়া বিভিন্ন প্রাচীন বৌদ্ধমন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো। কার্বন ডেটিং পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, অন্তত ২ হাজার ২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই মন্দিরটি। তবে মন্দিরের গঠনশৈলী দেখে আমাদের আমাদের ধারণা হচ্ছে, এটি তারও আগে নির্মাণ করা হয়েছিল।’
‘এই আবিষ্কার প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারের সবচেয়ে বড় প্রমাণগুলোর একটি। মন্দিরটির সরেজমিনে পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা নিশ্চিত হয়েছেন, এই মন্দিরটি একই সঙ্গে বৌদ্ধধর্মাবম্বীদের উপাসনাস্থল এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রমণদের (ধর্মীয় শিক্ষার্থী) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিল।’
বিজ্ঞাপন
এদিকে, পৃথক এক বিবৃতিতে এই প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের দলনেতা লুকা মারিয়া অলিভিয়েরে বলেন, ‘আজ থেকে দুই-আড়াই হাজার বছর আগে বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং তার আশপাশের অঞ্চল। কিন্তু প্রাচীন সেই ইতিহাস সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে ছিলো না। সেই হিসেবে এই মন্দিরের আবিষ্কার এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ আলো ফেলতে সক্ষম হয়েছে।’
মন্দিরটির ভেতরে প্রাচীন সাহিত্য, মুদ্রা, মাটির পাত্র, গয়না, সিলমোহর, মূর্তি ও টেরাকোটায় তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া গেছে উল্লেক করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে সময় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেসময় খাইবার-পাখতুনখোয়া, পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল এবং আফগানিস্তান ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং এসব রাজ্যে শাসনক্ষমতার শীর্ষে ছিল কয়েকটি গ্রীক রাজবংশ। ওই সময়ের স্থাপত্যকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দশনও এই মন্দির।’
আর্কিওলজি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অন্যান্য যেসব দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন পাওয়া গেছে, সেসব হলো— জর্ডান, মিশর, ইরাক, মেক্সিকো, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, গুয়েতেমালা ও পেরু।
এসএমডব্লিউ