বেইজিংয়ের একটি শ্মশানে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কন্টেইনারে নিচ্ছেন কর্মীরা। গত শনিবারের ছবি

চীনে সম্প্রতি করোনার প্রকোপ বেশ বেড়েছে। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ এবং বিক্ষোভের কারণে ভাইরাস-বিরোধী কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলও করেছে দেশটি। আর এতে দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা।

বলা হচ্ছে, দীর্ঘ লকডাউনের পর চীনের জিরো কোভিড পলিসি প্রত্যাহারের কারণে দেশটিতে ২১ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক তথ্য ও পর্যালোচনা বিষয়ক একটি সংস্থা এ কথা জানিয়েছে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম ভ্যাকসিনেশন এবং কম বুস্টার রেট ও হাইব্রিড ইমিউনিটির অভাবের কারণে চীন যদি তার শূন্য-কোভিড নীতি প্রত্যাহার করে তবে ১৩ লাখ থেকে ২১ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক গ্লোবাল হেলথ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ফার্ম এয়ারফিনিটি।

সংস্থাটির বিশ্লেষণ অনুসারে, ‘চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যাজুড়ে ইমিউনিটির পরিমাণ খুব কম। এছাড়া চীনা নাগরিকদের দেশীয়ভাবে উৎপাদিত সিনোভাক এবং সিনোফার্মের করোনা টিকা দেওয়া হয়েছিল যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম কার্যকর এবং সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে কম সুরক্ষা প্রদান করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।’

গ্লোবাল হেলথ ইন্টেলিজেন্স বিষয়ক এই কোম্পানি বলছে, চীনের জিরো কোভিড পলিসির অর্থ হচ্ছে, পূর্ববর্তী সংক্রমণের মাধ্যমে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় স্বাভাবিকভাবে ইমিউনিটি অর্জন করেনি।

এয়ারফিনিটি বলছে, ‘এসব কারণে আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ে যে মাত্রায় করোনায় সংক্রমণের ঢেউ দেখা গিয়েছিল, সেটি যদি চীনে শুরু হয় তাহলে এশিয়ার বৃহৎ এই দেশটিজুড়ে ১৬৭ মিলিয়ন থেকে ২৭৯ মিলিয়ন লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং এর কারণে ১৩ লাখ থেকে ২১ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’

এয়ারফিনিটির ভ্যাকসিন এবং এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ড. লুইস ব্লেয়ার বলেছেন, চীনের শূন্য-কোভিড নীতি তুলে নেওয়ার জন্য ইমিউনিটি বাড়াতে ভ্যাকসিনেশন বাড়ানো জরুরি, বিশেষ করে চীনের বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে।

তার ভাষায়, ‘পরবর্তীকালে ন্যূনতম প্রভাবসহ করোনার ভবিষ্যৎ ঢেউগুলো মোকাবিলা করার জন্য চীনের নাগরিকদের হাইব্রিড ইমিউনিটির প্রয়োজন হবে। এটি অন্যান্য দেশ এবং অঞ্চলেও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।’

এদিকে ভাইরাস-বিরোধী কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার পর চীনে করোনাভাইরাসে প্রথম প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার দেশটির সরকার এই ভাইরাসে দু’জনের প্রাণ গেছে বলে জানায়। যদিও চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।

এর আগে দেশজুড়ে জারি করা কঠোর করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লোকজনের তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৩ ডিসেম্বর চীনের সরকার ‘জিরো-কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। প্রায় তিন বছর ধরে কোভিড বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে অভিযোগ করে দেশটির নাগরিকরা চীনজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

এছাড়া চীনা অর্থনীতির আকারের কারণে দেশটিতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, চীনের জিডিপির আকার এবং চীনের অর্থনীতির আকারের পরিপ্রেক্ষিতে ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বের বাকি অংশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-এর বিরুদ্ধে চীনের শক্তিশালী অবস্থানে থাকা কেবল দেশটির জন্যই ভালো নয়, এটি বাকি বিশ্বের জন্যও ভালো।’

টিএম