পেরিয়ার আন্দোলনের জন্মভূমি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর একটি গ্রামে বর্ণ বৈষম্যের চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। সেখানে এখনও উচ্চবর্ণের মানুষ ও তফসিলি গোষ্ঠীর মানুষের জন্য পানির ট্যাংক আলাদা। এমনকী চায়ের দোকানে দুই বর্ণের মানুষের চা খাওয়ার গ্লাসও আলাদা।

আর সেই গ্রামেই দলিতদের জন্য নির্দিষ্ট একটি পানির ট্যাংকে পাওয়া গেছে মানুষের মল। তবে কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ু রাজ্যের ইরায়ুর গ্রামে। বুধবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে জেলা কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তে আরও ভয়াবহতা দৃশ্য উঠে এসেছে। তামিলনাড়ুর এই গ্রামে এখনও অস্পৃশ্যতা চর্চা করা হয়। স্থানীয় চায়ের দোকানে দুই ধরনের গ্লাসের ব্যবস্থা আছে এবং দলিতদের মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। এমনই একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বৃহস্পতিবার সেখানে তদন্তকারী দল পাঠাচ্ছে বিজেপি।

এনডিটিভি বলছে, সম্প্রতি তামিলনাড়ুর ওই গ্রামের ১০ হাজার লিটারের পানির ট্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষের মল পাওয়া যায়। এই পানির ট্যাংক থেকেই গ্রামটির দলিত সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০ জনের বাড়িতে পানি সরবরাহ করা হতো। এই বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার মধ্য তামিলনাড়ুর ইরায়ুর গ্রাম পরিদর্শন করেন পুদুকোত্তাই কালেক্টর কবিতা রামু এবং জেলা পুলিশ প্রধান বন্দিতা পান্ডে।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা পানীয় জলের উৎসের কারণে সমস্যা হতে পারে বলে পরামর্শ দেওয়ার পরে, কিছু যুবক ট্যাংকে উঠে ভেতরে পরীক্ষা করেন। এরপরই সেখানে মল পাওয়া যায়।

ওই এলাকার রাজনৈতিক কর্মী মোক্ষ গুনাভালাগান বলেন, ‘পানির ট্যাংকের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে মল পাওয়া গেছে। আর তা এতটাই যে পানি পর্যন্ত হলুদ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে মানুষ এই পানি পান করছিল। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর এই সত্য সামনে বেরিয়ে এসেছে।’

এদিকে ভয়াবহ এই ঘটনা কে বা কারা দায়ী তা এখনও পরিষ্কার নয়। গত কয়েকদিন ধরে পানির ট্যাংকির চারপাশের বেড়া খোলা ছিল। কালেক্টর কবিতা রামু এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘যুবকরা ট্যাংকে ওঠার পর সেটির ঢাকনা খোলা অবস্থায় দেখতে পায়... কেউই সেখানে কাউকে উঠে পানির ট্যাংকে মনুষ্য বর্জ্য ফেলতে দেখেনি।’

স্থানীয়রা বলছেন, এই এলাকায় জাতিগত বৈষম্য গভীর। তিন প্রজন্ম ধরে তাদের গ্রামের মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। গ্রামের চায়ের দোকানে এখনও তফশিলি জাতিদের জন্য আলাদা গ্লাস রয়েছে।

এই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ার পর কালেক্টর এবং জেলা পুলিশের প্রধান নিজেরাই তা যাচাই করতে যান এবং চায়ের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই দুই কর্মকর্তা তফসিলি জাতি তথা দলিত সম্প্রদায়ের সবাইকে গ্রামের মন্দিরে নিয়ে যান এবং মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বলেন।

এনডিটিভি বলছে, প্রায় একশো বছর আগে - ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার অনেক আগে - রামাসামি পেরিয়ার নামে এক ব্যক্তি মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের দাবিতে তামিলনাড়ু রাজ্যে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন।

এটি দ্রাবিড় আন্দোলনকেও অনুপ্রাণিত করেছিল এবং এই দর্শনটি এখনও রাজ্যের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।

টিএম