আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর নতুন বছর ২০২৩ সালে পদার্পণ করবে বিশ্ব। বিদায়ী বছর ২০২২ সালটি কেমন কেটেছে এখন চলছে সেগুলোর হিসাব-নিকাশ।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে ২০২২ সালটি ছিল অস্থির। যুদ্ধ-বিগ্রহ আর অস্থিতিশীলতায় কেটেছে বছরটি। অন্যান্য সবকিছুর মতো ২০২২ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারও ছিল অস্থির।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের সর্বোচ্চ আমদানিকারক দেশ চীনে চাহিদা কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক শঙ্কার কারণে সারা বছর জুড়েই টালমাটাল ছিল তেলের বাজার। তবে এতসব কিছু সত্ত্বেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো তেলের বার্ষিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।  

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। এর জেরে মার্চে বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩৯ দশমিক ১৩ ডলার ছুঁয়েছিল। যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্থিতিশীল হয় বাজার। ওই সময় বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ায়। যার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কাও কেটে যায়।

ডাচ বহুজাতিক ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান আইএনজির বিশ্লেষক ইয়া মানথে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘পণ্যের বাজারের জন্য ২০২২ ছিল অন্যরকম একটি বছর। সরবরাহের শঙ্কা পণ্যের মূল্য ও অস্থিরতা বৃদ্ধি করেছে।’

তিনি বলেছেন, ‘নতুন বছরটিও আরেকটি অনিশ্চয়তার বছর হতে যাচ্ছে।’

এদিকে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) ছিল বছরের শেষ লেনদেনের বছর। এদিন ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৮৫ দশমিক ৯১ ডলারে। যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল ৮০ দশমিক ২৬ ডলার ছিল। আগের দিনের তুলনায় এদিন দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছিল।

রয়টার্স জানিয়েছে, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বছর শেষে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস অপরিশোধিত তেলের মূল্য প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনা মহামারীর কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২০ সালে তেলের বাজারে ধস নামে। কিন্তু এক বছর পর বিশ্ব অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ২০২১ সালে আগের বছর তুলনায় মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

রয়টার্স এ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৩০ জন অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের চালানো একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নতুন বছর ২০২৩ সালে গড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৯ দশমিক ৩৭ ডলার থাকবে। চলতি বছরের নভেম্বরেও একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ওই সময় তারা যে ধারণা করেছিলেন তার তুলনায় সর্বশেষ দামটি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দাম গড়ে থাকবে ৮৪ দশমিক ৮৪ ডলার। এটিও আগের ধার‌ণার তুলনায় কম।

বছরের শেষদিকে ছুটিকালীন সময়ে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষক লিয়ন লি বলেছেন, ‘তেলের সরবরাহের যে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে সেটি আগামী বছর কেটে যাবে। কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে চাহিদা কমে যাবে।’

এদিকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংকগুলো সুদের হার বৃদ্ধি করায় বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায়। যার প্রভাবে তেলের মতো পণ্য, যেগুলো ডলারের মাধ্যমে লেনদেন হয় সেগুলো অন্য দেশগুলোকে বেশি দামে কিনতে হয়।

রয়টার্স আরও জানিয়েছে, চীন তাদের কঠোর কোভিড নীতি থেকে সরে আসায় চাহিদার যে শঙ্কা ছিল সেটিও কেটে যাবে। তবে চীনে আবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থাটি।

সূত্র: রয়টার্স

এমটিআই