চীনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। মূলত জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। প্রতিদিনই এশিয়ার এই দেশটিতে বহু মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম উঠে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় চীনকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে তাইওয়ান। একইসঙ্গে নিজ ভূখণ্ডের কাছে চীনা সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়েও সরব হয়েছে তাইপেই। রোববার (১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে রোববার চীনকে ‘প্রয়োজনীয় সহায়তা’ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েন। একইসঙ্গে দ্বীপের কাছে চীনা সামরিক কার্যকলাপ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উপকারী নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, নীতির আকস্মিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে কোভিড ব্যাপক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সম্ভবত চীনে প্রতিদিন লাখ লাখ লোক এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েন তার ঐতিহ্যবাহী নতুন বছরের বার্তায় বলেছেন, চীনে করোনার সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি সবাই দেখেছে। তিনি বলেছেন, ‘মানবিক প্রয়োজনের অবস্থানের ভিত্তিতে যতদিন দরকার হয়, ততদিন আমরা আরও বেশি লোককে মহামারি থেকে বের করে আনতে এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ নতুন বছর কাটাতে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক।’

অবশ্য করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় চীনকে তাইওয়ান ঠিক কী ধরনের সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক সে বিষয়ে বিশদ কোনও বিবরণ দেননি প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েন। তবে অতীতে কোভিডের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে নিজ নিজ ব্যবস্থা নিয়ে বারবারই বিতর্কে জড়িয়েছে তাইওয়ান এবং চীন।

গত বছর চীনে সংক্রমণ বাড়ার পরে মহামারির বিরুদ্ধে অকার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য তাইওয়ানের সমালোচনা করেছিল বেইজিং। অপরদিকে চীনের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার অভাব এবং তাইওয়ানে ভ্যাকসিন সরবরাহে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করার অভিযোগে বেইজিংকে অভিযুক্ত করেছে তাইওয়ান। অবশ্য এসব অভিযোগ বেইজিং বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

এছাড়া তাইওয়ানের প্রতি নিজের সামরিক শক্তির সরাসরি জানানও নিয়মিত দিয়ে চলেছে চীন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই দ্বীপ ভূখণ্ডটির দিকে ৭১টি যুদ্ধবিমান এবং সাতটি জাহাজ পাঠিয়েছিল এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি। 

তবে নিজের নতুন বছরের বার্তায় সাই ​​ইং-ওয়েন চীনের সাথে সংলাপের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ সমস্যা সমাধানের কোনও বিকল্প নয়।

এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শনিবার সন্ধ্যায় তার নববর্ষের ভাষণে তাইওয়ানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের লোকেরা ‘একই পরিবারের সদস্য’ এবং এদিন এই দ্বীপটিকে চীনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার বিষয়ে কোনও কথাই উল্লেখ করেননি তিনি।

সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সাই বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট শির ‘তুলনামূলক ভদ্র’ এই মন্তব্য সম্পর্কে অবগত। তবে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাই - তাইওয়ানের কাছে পিপলস লিবারেশন আর্মির সামরিক কার্যকলাপ আন্তঃপ্রণালী সম্পর্ক বা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মোটেও ভালো নয়।’

এদিকে সাইয়ের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২টি চীনা সামরিক বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

২০২১ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

সাই বারবার বলেছেন, তিনি চীনের সাথে আলোচনা এবং শান্তি চান কিন্তু আক্রমণ হলে তাইওয়ান আত্মরক্ষা করবে এবং শুধুমাত্র দ্বীপের ২৩ মিলিয়ন মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

অবশ্য চীন সাই ​​ইং-ওয়েনকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে দেখে এবং তার সাথে আলোচনা বা সংলাপ করতে অস্বীকার করেছে।

টিএম