চীনে গত ডিসেম্বর থেকে যে করোনা সুনামি শুরু হয়েছে, শিগগিরই তা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইংরেজি ২০২৩ সালের আগমন উপলক্ষে শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক শুভেচ্ছা ভাষণে জনগণকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই ভাষণে চীনা জনগণের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রত্যেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে, আমাদের ঠিক সামনেই অপেক্ষা করছে আশার আলো।’

চলতি মাসে চীনে করোনার ঢেউ শুরু হওয়ার পর রোববার দ্বিতীয় বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন জিনপিং। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি, তদখন বলেছিলেন— মহামারি প্রতিরোধ ও জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

করোনার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মহামারির প্রথম বছর, ২০২০ সালে চীনসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ দীর্ঘ লকডাউন, সপ্তাহের পর সপ্তাহব্যাপী বাধ্যতামূল কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ববিধি, বাধ্যতামূলক করোনাটেস্টসহ কঠোর সব বিধি জারি করেছিল। তবে ২০২১ সালের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রায় সব বিধি উঠিয়ে নিলেও চীন সে পথে হাঁটেনি।

বরং মহামারির প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও দেশজুড়ে যাবতীয় কঠোর করোনাবিধি জারি রেখেছিল চীন। সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির এ অবস্থান পরিচিতি পেয়েছিল জিরো কোভিড নীতি হিসেবে।

তার সুফলও অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। মহামারির দুই বছরে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে— সেখানে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছিল এক হাজারের কিছু ওপরে।

কিন্তু প্রায় তিন বছর কঠোর করোনাবিধির মধ্যে থাকার জেরে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত নভেম্বরের শেষদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। জনগণের এই বিক্ষোভের পর চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে এসে সব করোনাবিধি শিথিল করে দেয় দেশটির সরকার।

তার পর থেকেই দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে এবং অনেক ওষুধের দোকানে করোনার ওষুধের যোগান শেষ হয়ে গেছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর মানুষের।যুক্তরাজ্যেভিত্তিক স্বাস্থ্যতথ্য গবেষণা সংস্থা এয়ারফিনিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীনে কোভিডজনিত অসুস্থতায় প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার।

তবে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করছে না চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে— রোববার চীনে ৭ হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১ জন।

তবে এ দিন চীনের বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, চীনের হাসপাতাল ও শ্মশানগুলো উপচে পড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতদেহের ভিড়ে। এই আক্রান্ত ও মৃতদের প্রায় সবার বয়স ৬০ বছরের ‍ঊর্ধ্বে।

এসএমডব্লিউ