ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের একটি গ্রামে বিস্ফোরণে দুই শিশু নিহত ও আরও পাঁচ বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। সোমবার কাশ্মিরের রাজৌরি জেলায় বিস্ফোরণে হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সোমবারও একই এলাকায় কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে চারজনের প্রাণহানি ঘটে।

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলেছে, সোমবার রাতে দক্ষিণ রাজৌরি জেলার ধাংরি গ্রামে একটি বাড়ির কাছে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে ৫ ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কাশ্মির পুলিশের কর্মকর্তা মুকেশ সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, রোববার রাতে দুই বন্দুকধারী ধাংরি গ্রামের তিনটি বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে চার বেসামরিক নাগরিক নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

ধাংরিতে এই দুই হামলার ঘটনায় দেশটির পুলিশ সশস্ত্র হামলাকারীদের দায়ী করেছে। ওই এলাকাটির অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে বিতর্কিত হিমালয় অঞ্চলকে বিভক্তকারী ব্যাপক সামরিকায়িত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি।

তবে ধাংরির যে স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেখানে হামলাকারীরা রোববার রাতে বিস্ফোরক রেখে গিয়েছিল কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। সোমবার রাতের বিস্ফোরণের পরপরই ওই এলাকায় ভারতীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অভিযান শুরু হয়েছে।

রাজৌরির ধাংরি হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠদের একটি গ্রাম। পৃথক দুই বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে হতাহতের শিকার সবাই হিন্দু ধর্মের। সোমবারের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে ওই গ্রামে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সাল থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশি ভারত-পাকিস্তানের বিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মির। বিবাদপূর্ণ কাশ্মিরের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু উভয় দেশই দুই কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে। কাশ্মির নামে ছোট একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনেরও।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এ দুই প্রতিবেশি দেশ ১৯৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে তিনবার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এরমধ্যে কেবল কাশ্মির ঘিরেই দুই দেশের মাঝে যুদ্ধ হয়েছে দু’বার।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতা অথবা প্রতিবেশি পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দাবিতে সেখানে দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, ১৯৮৯ সালে নয়াদিল্লির শাসনের বিরোধিতায় শুরু হওয়া সশস্ত্র বিদ্রোহে এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

তবে হিমালয়ের কোল ঘেঁষে থাকা এই অঞ্চলটিতে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার কাশ্মিরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেওয়ার পর নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকেও ক্ষুব্ধ করে তোলে।

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।

এসএস