ওয়ারশের রাস্তায় পোলিশ পুরুষ ও নারীদের দীর্ঘ লাইন। যুদ্ধের জেরে আশ্রয়ের জন্য তারা কম ধ্বংসপ্রাপ্ত জেলার দিকে যাচ্ছেন। ১৯৪৪ সালের ছবি

মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা। আর এই সময়কালেই ইউরোপের বহু দেশে নাৎসী জার্মানির বিভৎসতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

জার্মানির তাণ্ডবে সেসময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি পোল্যান্ড। আর তাই দেশটি সেই ক্ষতের ক্ষতিপূরণও দাবি করে আসছে জার্মানির কাছে। তবে পোল্যান্ডের আশায় পানি ঢেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ পূর্ব  ইউরোপের এই দেশটি জার্মানির কাছে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দাবি করেছিল।

বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিআইএস) পার্টি জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে সরব হয়েছে এবং জার্মানিকে তার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ পালন করতে উদ্বুদ্ধ করে আসছে।

পোল্যান্ড গত বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো বা (১ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার) নির্ধারণ করে এবং সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণের দাবিতে বার্লিনে একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক নোট পাঠায়।

তবে জার্মানি বারবারই পোল্যান্ডের ক্ষতিপূরণের এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। বার্লিন বলছে, ১৯৫৩ সালের চুক্তিতে পোল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জার্মান সরকারের মতে, যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে এবং এ বিষয়ে তারা কোনও আলোচনায় যুক্ত হতে চায় না।’

অন্যদিকে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে যে, তারা গত ৩ অক্টোবর পোল্যান্ড থেকে আসা একটি মৌখিক নোটের জবাব দিয়েছে’। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি মন্ত্রণালয়।

অবশ্য জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক গত বছরের অক্টোবরে ওয়ারশ সফরের সময় ক্ষতিপূরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি তিনি বিষয়টি বার্লিনের জন্য একটি মিমাংসিত অধ্যায় বলেও দাবি করেছিলেন।

অবশ্য ক্ষতিপূণের দাবি প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না পোল্যান্ড। পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তারা ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে জার্মান আগ্রাসন এবং দখলের জন্য ক্ষতিপূরণ আরও চাইতেই থাকবে’।

এছাড়াও মঙ্গলবার ওয়ারশ বলেছে, তারা যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

মূলত পোলিশ রক্ষণশীলদের যুক্তি, সোভিয়েত ইউনিয়নের কারণে ১৯৫৩ সালের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল তাদের দেশ।

টিএম