ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

ফ্রান্সের ব্যঙ্গবিদ্রুপ সাময়িকী শার্লি হেবদোতে ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় তেহরানভিত্তিক একটি ফরাসি গবেষণাকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।

সেই সঙ্গে বুধবার ইরানে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস রোশেকে তলব করার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাপ্তহিক সাময়িকী শার্লি হেবদো ২০২৩ সালের প্রথম সংখ্যায় খামেনি এবং তার অনুসারি ও ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী সরকারের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতার দু’ধরনের কার্টুনচিত্র ছেপেছে। এক ধরনের চিত্রে দেখা গেছে— খামেনি ও তার অনুসারীরা নগ্ন অবস্থায় উদ্দাম যৌনতায় মেতেছেন; অপর চিত্রে দেখা যাচ্ছে— ইরানে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে থামাতে বিক্ষোভকারীদের বেত্রাঘাত করা হচ্ছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে এবং এর দায়দায়িত্ব অবশ্যই ফ্রান্সের সরকারকে নিতে হবে।’

‘আমরা ধারাবাহিকভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রথম ধাপ হিসেবে (তেহরানের) ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ (আইএফআরআই) বন্ধ করা হয়েছে।’

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর কোনো অধিকার ফ্রান্সের নেই।’

এদিকে, শার্লি হেবদোর সম্পাদক লওরেন্ট সৌরিসিউ, যিনি তার সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছে রিস নামে পরিচিত এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ইরানে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনেই এসব কার্টুন ছেপেছেন তারা। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোন্নাও পরক্ষোভাবে তাকে সমর্থন করেছেন।

সরকারের হিজাব নীতি না মানায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনি। পরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যু হয় তার।

মাশা আমিনির মৃত্যুর পর অভূতপূর্ব সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। ইরানের সরকার অবশ্য এই বিক্ষোভকে শুরু থেকে ‘দাঙ্গা’ নামে আখ্যায়িত করে আসছে। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে গুলি চালানো, গ্রেপ্তার ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনেও আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে ইরানে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭৬ জন বিক্ষোভকারী।

বুধবার এক সম্পাদকীয়তে শার্লি হেবদোর সম্পাদক বলেন, ‘ধর্মীয় শাসনের নামে ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানের সাধারণ জনগণকে নানাভাবে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইরানের জনগণ এসব দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং এই কার্টুন ছাপানোর মাধ্যমে আমরা সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার প্যারিসভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এলসিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোন্না বলেন, ‘ফ্রান্সে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃত, যা ইরানে নেই। ইরানে এই মুহূর্তে যা চলছে… এককথায় বলা যায়— সেখানকার সরকার নিজেদের জনগণের সঙ্গে সংঘাতে মেতে উঠেছে।’

এসএমডব্লিউ