যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ফাইল ছবি)

অনথিভুক্ত অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে দূরে থাকতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইসঙ্গে চারটি দরিদ্র দেশ থেকে সীমিত সংখ্যায় বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথও উন্মুক্ত করেছেন তিনি।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক ইস্যুতে এই সিদ্ধান্ত নেন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে শিগগিরই নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন জো বাইডেন। আর সেটির আগে বাইডেন এমন একটি বিষয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন যেটাতে তিনি অভিবাসনবিরোধী রিপাবলিকান এবং বৃহত্তর মানবাধিকারের পক্ষে থাকা বামপন্থি ডেমোক্র্যাট উভয়ের চাপের মুখোমুখি হয়েছেন।

এএফপি বলছে, মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে ‘ভঙ্গুর’ বলে অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মেক্সিকো সিটিতে উত্তর আমেরিকার নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে আগামী রোববার টেক্সাসের মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত শহর এল পাসো পরিদর্শন করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। আসন্ন ওই শীর্ষ সম্মেলনে সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুটি মূল বিষয় হিসেবে থাকবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তার নতুন পরিকল্পনার অধীনে টাইটেল ৪২ নামক বিতর্কিত আইনটি আরও প্রসারিত করা হবে যাতে সীমান্তরক্ষীরা স্থলপথে পৌঁছানো আরও বেশি অভিবাসীকে তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে।

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ‘কেবল সীমান্তে এসে জড়ো হবেন না’।

হোয়াইট হাউস আশা করছে, মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে প্রায়শই বিপজ্জনক ভ্রমণের পরে সীমান্তে হাজির হওয়া রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীকে কঠোর এসব পদক্ষেপগুলো আটকাবে।

অন্যদিকে বামপন্থি সমালোচকদের শান্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনিজুয়েলা থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার যোগ্য অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

বাইডেন বলেন, তাদের অবশ্যই নিজ দেশে আবেদন করতে হবে, একটি মার্কিন স্পনসর থাকতে হবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হবে। তিনি বলেন, ‘এটি নিরাপদ ও মানবিক এবং এটি কার্যকর।’

তবে তিনি আরও বলেন, সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে ঠিক করার জন্য কংগ্রেসকে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সীমান্ত ও অভিবাসন অবকাঠামোর জন্য তহবিল বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, টাইটেল ৪২ আইনটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এই আইনের সাহায্যে যে কোনও শরণার্থী, উদ্বাস্তু, অ্যাসাইলামসিকার, অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বিনা নোটিশে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায়। এমনকি সীমান্তে আটকেও দেওয়া যায় অভিবাসী-শরণার্থীদের।

২০২০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন করোনা মহামারিকে সামনে রেখে এই আইনটি কার্যকর করেছিল। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে আইনটি জারি থাকবে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।

বাইডেন প্রশাসন আইনটি তুলে দিতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্য এটি কার্যকর রাখার পক্ষে দাবি জানায়। প্রতিটি রাজ্যই ছিল রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে আদালত শেষ পর্যন্ত ৫-৪ ভোটে আইনটি আপাতত কার্যকর রাখার সিদ্ধান্ত দেয়।

১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিতর্কিত টাইটেল ৪২ আইনটি পাস হয়। গণস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এই আইন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আইনটি প্রথম কার্যকর হয় ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের হাত ধরে।

এই আইনের সাহায্যে অতি সহজেই ভিসাহীন অ-যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে বিনা নোটিশে দেশ থেকে বিতাড়িত করা যায়। এখনও পর্যন্ত এই আইন দুই দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বার প্রয়োগ হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে প্রশাসন। এই আইনের সাহায্যে বহু শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

টিএম