দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৮ জানুয়ারি) দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ও কট্টরপন্থি নেতা জাইর বলসোনারোর সমর্থকরা এই হামলা করেন।

এই ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকদের এই কর্মকাণ্ডের পর তাদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ক্ষমতার লড়াই ঘিরে রোববার যেন বিক্ষোভের আগুনে বিস্ফোরিত হয় ব্রাজিল। আর এতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায় দেশটির কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস ও সুপ্রিম কোর্টে।

চরম ডানপন্থি এই সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একের পর এক জায়গায় হামলা চালায়। বিরোধী দলের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে ‘ফ্যাসিস্ট’ হামলা বলে আখ্যা দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।

রোববার ব্রাজিলের কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টের সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হামলার ঘটনা ফের একবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটলে হামলার কথাই মনে করিয়ে দিলো।

যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ট্রাম্প সমর্থকরা হামলা চালিয়েছিলেন, তেমনই রোববার সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকরাও সবুজ-হলুদ পতাকা গায়ে জড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে একে একে কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ভাঙচুর চালান তারা।

অবশ্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষের পর রোববার সন্ধ্যায় রাজধানী ব্রাসিলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এসব ভবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় পুলিশ। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা রোববার বন্যা বিধ্বস্ত আরারাকোয়ারা শহরে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় হামলার খবর পান তিনি। এরপর সেখান থেকেই তিনি ডিক্রি জারি করেন।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। পরে রাজধানী শহরে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট লুলা নিজেই সুপ্রিম কোর্ট ভবনে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেন।

ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রী ফ্লাভিও ডিনো স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, হামলার ঘটনার পর প্রায় ২০০ জনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিবিসি বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রবীণ বামপন্থি এই নেতা শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য রাজধানীতে জাতীয় নিরাপত্তা দল পাঠানোর আগে জরুরি ক্ষমতা ঘোষণা করতে বাধ্য হন। তিনি রাজধানীর প্রধান রাস্তাসহ যেখানে সরকারি ভবন রয়েছে সেসব এলাকা ২৪ ঘণ্টা জন্য বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ডিনো বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের রাজধানীতে আনার জন্য ব্যবহার করা প্রায় ৪০ টি বাস হয়েছিল জব্দ করা হয়েছে এবং তিনি এই আক্রমণকে ‘জোর করে (বিক্ষোভকারীদের) ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটি অযৌক্তিক প্রচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বারবার মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন যে, তিনি গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে হেরেছেন এবং গত সপ্তাহে নতুন সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে দেশত্যাগ করেছেন।

৬৭ বছর বয়সী বলসোনারো এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন বলে মনে করা হচ্ছে এবং তিনি ইতোমধ্যেই এই হামলার নিন্দা করেছেন। এছাড়া সহিংসতা শুরু হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় দাঙ্গাকারীদের উৎসাহিত করার দায়ও অস্বীকার করেছেন তিনি।

এদিকে হামলার নিন্দা করে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সমর্থকরা এমন কিছু করল, যা এ দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করব এবং আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।’

এছাড়া কংগ্রেসে প্রবেশকারী বিক্ষোভকারীদের আটকাতে ব্যর্থতার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনাও করেছেন তিনি।

লুলা বলেন, ‘আপনি ছবিতে দেখতে পাবেন যে, তারা (পুলিশ অফিসাররা) মানুষকে প্রাকা ডস ট্রেস পাওয়ারের দিকে হেঁটে পথ দেখাচ্ছেন। আমরা এই ভন্ডদের অর্থদাতাদের খুঁজে বের করতে যাচ্ছি এবং তারা সবাই আইনের আওতায় আসবে।’

বিবিসি বলছে, ব্রাজিলিয়ান আউটলেট ও ​​গ্লোবো’র শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা কংগ্রেসের ক্যাম্পাস দখলের সময় কিছু পুলিশ অফিসার হাসছেন এবং একসঙ্গে ছবি তুলছেন।

এদিকে কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন: ‘আমি গণতন্ত্রের ওপর হামলার নিন্দা জানাই এবং ব্রাজিলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপরও ( হামলার নিন্দা জানাই)। ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং ব্রাজিলের জনগণের ইচ্ছাকে ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়।’

সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা একজন পুলিশ সদস্যকে তার ঘোড়া থেকে টেনে নিয়ে ভবনের বাইরে নিয়ে আক্রমণ করছে।

এছাড়া জাতীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে হলুদ জার্সি পরিহিত কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করছে।

টিএম