করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ঘোষিত এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের কোভিড-১৯ সহায়তা বিলে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মাধ্যমে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকান নাগরিকদের সহায়তার জন্য ঘোষিত এই প্যাকেজটি আইনে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই বিলে স্বাক্ষর করেন। এর একদিন আগে বিলটি পাস করে কংগ্রেস। কোনো রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার সমর্থন ছাড়াই মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এই বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়। বাইডেনের মতে, করোনা সহায়তা প্যাকেজটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ফের শক্তিশালী করবে।

করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার আকাশ ছুঁয়েছে। মার্কিন শ্রম দফতরের মতে, বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আর এই কারণে বিলটি আমেরিকানদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।

টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার (১২ মার্চ) এই বিলে স্বাক্ষর করবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের অনুমানের চেয়েও কংগ্রেস খুব দ্রুততার সঙ্গে বিলটি পাস করে দেওয়ায় স্বাক্ষরের জন্য সেটা বৃহস্পতিবারই প্রেসিডেন্টের সামনে পেশ করা হয়।’

বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে প্রত্যেক আমেরিকানকে সরাসরি দেওয়া হবে এক হাজার ৪০০ ডলার করে। এছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৪১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়া হবে ৪৪ হাজার কোটি ডলার। বিলে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি এবং করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার গতি আরও বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

এছাড়া এই বিলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর জন্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, পাবলিক স্কুলগুলোর জন্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার, করোনা টেস্ট এবং এ বিষয়ক গবেষণার জন্য ৪৯ বিলিয়ন ডলার এবং গণটিকাদান কর্মসূচি ও টিকা বন্টনের জন্য ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মজুরি কাঠামোতেও পরিবর্তনের বিষয়ে বলা হয়েছে নতুন এই বিলটিতে। বর্তমানে দেশটিতে ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ৭ দশমিক ২৫ ডলার। বিলটিতে সেটি প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টা হিসেবে মজুরি ১৫ ডলার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। একক দেশ হিসেবে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনাও এই দেশটিতেই। এছাড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ। একইসঙ্গে গত প্রায় এক বছরে ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বেতন কমে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে বহু মানুষের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতাগ্রহণের সপ্তাহখানেক আগে এই প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। সেসময় তিনি বলেন, এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা গত বেশ কয়েকটি প্রজন্ম কোনো দিন দেখেনি, কোনো দিন এমন সময়ের কথা ভাবতেও পারেনি।

তার মতে, দু’টি ধাপে এই প্যাকেজ মানুষের উপকার করবে। প্রথমত- অর্থনৈতিক ভাবে মানুষকে আবারও চাঙ্গা করবে। দ্বিতীয়ত- করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার জন্য সহায়ক হবে।

আর্থিকভাবে সাহায্য না করলে মানুষকে এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করা যাবে না। আর সে কারণেই এই প্যাকেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সেসময় দাবি করেছিলেন বাইডেন।

সূত্র: বিবিসি

টিএম