দীর্ঘসময় ধরে বিমানবন্দরে বসবাস করা এক উদ্বাস্তু কানডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। উত্তর আমেরিকার এই দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম হাসান আল কনতার। তিনি সিরীয় শরণার্থী। বুধবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার দিনটি সিরীয় শরণার্থী হাসান আল কনতারের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আটকে থাকা সাত মাসসহ - বছরের পর বছর অনিশ্চয়তার পরে - আল কনতার এদিনই অবশেষে কানাডার নাগরিক হয়েছেন।

নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফোনকলে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আজ এত বছর পর এই অর্জন যেন বিজয়ের ঘোষণার মতো। আজ আমি আর রাষ্ট্রহীন নই।’

হাসান আল কনতারের বয়স এখন ৪১ বছর। তিনি ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বের নজরে আসেন। সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসার পর আইনি কোনও অভিবাসন নথি ছাড়া মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়েন। বৈধ নথি ছাড়া সেসময় তিনি মালয়েশিয়া ছাড়তে বা অন্য কোনও দেশে যেতে পারছিলেন না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সেসময় তার পোস্টগুলো সারা বিশ্ব থেকে সহানুভূতি লাভ করে। বুধবার কানাডার নাগরিকত্বের শপথ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় আল কনতার বলেন, আশ্রয় খোঁজার জন্য তার দীর্ঘ লড়াই অবশেষে মূল্য পেয়েছে। তবে নিজের এই অর্জনে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেটিও মাথায় রাখছেন।

আল কনতার আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এটি পেতে আমি একটি বিধ্বস্ত দেশ হারালাম। আমি আমার বাবার জন্য সেখানে থাকতে পারিনি যখন তার আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল বা তিনি মারা যাওয়ার সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। আমি যখন বিমানবন্দরে আটকে ছিলাম তখন স্কাইপে আমার ভাইয়ের বিয়ে দেখতে হয়েছে। আমাকে জেলে নেওয়া হয়েছিল এবং বর্ণবাদী ব্যবস্থার মোকাবিলাও করতে হয়েছিল।’

টানা প্রায় ১২ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।

জাতিসংঘের মতে, গত এই এক দশকে সিরিয়ায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি সিরিয়ান বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের মধ্যে ৬৬ লাখেরও বেশি সিরিয়ার বাইরে চলে গেছেন। এসব মানুষের অনেকেই সিরিয়ার বাইরে শরণার্থী শিবিরে আটকে আছেন এবং আইনি জটিলতায় পড়েছেন।

আল কনতার আল জাজিরাকে বলেছেন, সমর্থন ও সহায়তা পাওয়ার পরিবর্তে, সিরিয়ার শরণার্থীরা প্রায়শই আরও আবদ্ধ অবস্থার মধ্যে পড়ছে কারণ বিশ্বের বহু দেশ অভিবাসন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা সীমিত রাখতে চাইছে।

এমনকি অনেকে ইউরোপে পৌঁছানোর মরিয়া প্রচেষ্টায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছে। বিপজ্জনক এসব যাত্রায় প্রায়শই অভিবাসীরা তাদের জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করেছে। আবার যারা নিরাপদে ইউরোপে পৌঁছায় তারাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

এমনকি ডেনমার্কের মতো দেশগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টাও করেছে।

আল কনতার বলেছেন, ‘আমাদের মুখের সামনে সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সিরিয়ানরা বেঁচে আছি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। কিন্তু শরণার্থী সমস্যা বাড়ছে এবং অধিকাংশ দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না।’

টিএম