রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কয়েকদিন ধরে মিত্রদের কাছে ভারী ট্যাংক চেয়ে আসছে ইউক্রেন। আর ইউরোপের মধ্যে লিওপার্ড-২ নামের সর্বাধুনিক ট্যাংক রয়েছে জার্মানির। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে ভারী অস্ত্র পাঠাতে চায় না দেশটি। কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন জার্মানির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ট্যাংক দেওয়ার জন্য।

তবে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠাতে শর্ত জুড়ে দিয়েছে জার্মানি। তারা জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে ট্যাংক পাঠায়, তবেই তারা নিজেদের ট্যাংক পাঠাবে।

জার্মানির অত্যাধুনিক লিওপার্ড-২ ট্যাংক রয়েছে ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলোর কাছেও। তবে জার্মানির অনুমতি ছাড়া এসব ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে পারবে না কোনো দেশ। যদি জার্মানি শেষ পর্যন্ত রাজি হয় তাহলে  ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো থেকে ইউক্রেনে ঢুকবে ভারী ট্যাংক।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জার্মান সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে একাধিকবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকেও ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠাতে হবে।

জার্মানির অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখপাত্র কেরিন জিন-পিয়ার কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) বিশ্বাস করেন ইউক্রেনে কী ধরনের অস্ত্র ও কী ধরনের সামরিক সহায়তা পাঠানো হবে সে বিষয়ে প্রত্যেক দেশকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো মেরামতে ১২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েকদিন বাদে ইউক্রেনে কানাডায় তৈরি স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে রাজি নন।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এম১ আব্রাহম ট্যাংক চাইছে ইউক্রেন। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এটি সরবরাহে প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান নীতি নির্ধারক কলিন কাল।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার অবস্থানে যাইনি। আব্রাহম ট্যাংক অনেক জটিল একটি অস্ত্র। এটি দামি। এই ট্যাংকের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন। এটিতে বিমানের ইঞ্জিন রয়েছে।

মার্কিন এ কর্মকর্তা এমন সময় এ মন্তব্য করলেন যখন শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) জার্মানির রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে বৈঠকে মিলিত হবেন ৪০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে ট্যাংক দেওয়া নিয়ে কথা হবে।

 জার্মানির ওপর চাপ বাড়ছে

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। পোল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড জানিয়েছে, যদি জার্মানি অনুমতি দেয় তাহলে তারাও কিয়েভে লিওপার্ড ট্যাংক পাঠাবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার এক ভার্চ্যুয়াল ভাষণে পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, রাশিয়া তাদের পরবর্তী ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্থল হামলা চালানোর আগেই যেন ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়া হয়।

এদিকে জার্মানির লিওপার্ড-২ ট্যাংকটি পশ্চিমাদের দেশগুলোর কাছে থাকা ট্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটির ওজন ৬০ টন (৬০ হাজার কেজি)। ট্যাংকটিতে রয়েছে ১২০ এমএম স্মুথবোর গান। পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম লিওপার্ড-২ ট্যাংক।

সূত্র: রয়টার্স

এমটিআই