নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের আকস্মিক পদত্যাগ বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন নারী নেতাদের ছোট ক্লাবের জন্য এক বড় ক্ষতি। যদিও অন্যান্য নারীরা বড় বড় দেশের নেতৃত্ব দেন, তারপরও আর্ডার্ন ছিলেন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাবান সরকার প্রধানদের একজন এবং বিশ্বের অনেক নারীর কাছে তিনি এক আলোকবর্তিকা।

২০১৯ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী সরকারপ্রধানের তকমা পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের সাব্কে প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনকালে সন্তানের জন্ম দেওয়া দ্বিতীয় এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া প্রথম নারীও তিনি।

জাতিসংঘের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ১৫টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। তাদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, তানজানিয়ার সামিয়া সুলুহু হাসান এবং পেরুর প্রেসিডেন্ট দীনা বোলুয়ার্তে ছিলেন।

তবে আর্ডার্নের আবেগময় আকস্মিক পদত্যাগের ঘটনায় নিউজিল্যান্ড এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের কিছু নারী কিউই প্রধানমন্ত্রী গত ছয় বছরের মেয়াদের সময় যে ধরনের কটূক্তি সহ্য করেছেন, সেই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক বলেছেন, ‘জেসিন্ডা এমন পর্যায়ের ঘৃণা ও ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন, যা আমার অভিজ্ঞতায় আমাদের দেশে নজিরবিহীন।’

গত বছরের জুনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, রাজনীতিতে জ্যেষ্ঠ পদে থাকা নারীরা প্রায়ই পুরুষদের তুলনায় বেশি এবং অত্যধিক আক্রমণাত্মক হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক অফিসে নারীরা তাদের পুরুষ সমবয়সীদের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

পদত্যাগের সময়ও ভাঙলেন প্রতিবন্ধকতা

কাজের জন্য যে প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তার কোনও মূল্য নেই। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন প্রায় ছয় বছর অফিসে থাকার পর এই উপসংহারে পৌঁছেছেন বলে মনে হচ্ছে।

শিগগিরই সাবেক হতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত দক্ষিণ গোলার্ধের প্রতিফলিত এক গ্রীষ্মের সময় এসেছে এবং আগামী অক্টোবরে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে তার বিদায়কেও দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন দেখছেন না বলে জানিয়েছেন।

‘আমি আশা করেছিলাম, সেই সময়ের মধ্যে আমার দায়িত্ব পালনের জন্য যা প্রয়োজন, শেষ পর্যন্ত আমি তা খুঁজে পাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমি তা পাইনি। আর আমার ক্ষমতায় থাকাটা নিউজিল্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর কাজ হবে।’

রোববার তার রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির ককাস একজন নতুন নেতা নির্বাচন করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়বেন আর্ডার্ন। আর এর মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ছোট্ট শহর মরিনসভিলের এক রেস্তোরাঁর সাবেক ক্যাশিয়ারের চমকে যাওয়ার মতো ক্যারিয়ারের দ্রুত সমাপ্তি দেখবে বিশ্ব।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, সিএনএন।

এসএস