শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ফাইল ছবি

অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতিকে ফের সঠিক পথে ফেরাতে চীন ও ভারতের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত যে আলোচনা শুরু করেছিল তার সরকার— তা সাফল্যের মুখ দেখছে।

বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে এ তথ্য।

বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের (ভারত-চীন) সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন সম্পর্কিত আলোচনা শুরু করেছি এবং সেই আলোচনা ইতোমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখছে।’

গত কয়েক বছরে চীন থেকে শত শত কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সাবেক রাজাপাকসে সরকার। তারপর ২০২১ সাল থেকে অর্থনৈতিক সংকট শুরুর পর থেকে ভারতের কাছে থেকেও দেশটি গ্রহণ করেছে কয়েকশ’ কোটি টাকার ঋণ।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ডলারের মজুত প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় সেসব ঋণ দ্রুত পরিশোধ এই মুহূর্তে একেবারেই অসম্ভব শ্রীলঙ্কার পক্ষে। পাশাপাশি, দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের ঋণ সহায়তা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই।

এদিকে, আইএমএফ থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত হলো সংস্থাটির আস্থা অর্জন করা। অর্থাৎ ঋণ নিয়ে তা ঠিকমতো পরিশোধ করার নিশ্চয়তা। আইএমএফের আস্থা অর্জনের অংশ হিসেবেই ভারত ও চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার। এ আলোচনার আওতায় শ্রীলঙ্কার যত বকেয়া ঋণ এ দু’টি দেশের কাছে আছে, সেসব পরিশোধে সময়সীমা ও কিস্তি সম্পর্কিত নতুন সব শর্ত নিয়ে সংলাপ চলছে।

সাবেক রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অদূরদর্শীতা-উদাসীনতা, বেহিসেবী ব্যয়, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও করোনা মহামারির কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। যেখানে একটি দেশের অর্থনীতির ন্যূনতম ভারসাম্য ধরে রাখতে একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলারের মজুত থাকতে হয়, সেখানে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভে ডলারের মজুত বলতে প্রায় কিছুই নেই।

২০২১ সাল থেকেই অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়, ২০২২ সালে তা তীব্র রূপ নেয়। সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার মতো অর্থেও টান পড়ে।

বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, চলতি বছর খাদ্য আমদানি বাবদ অর্থবরাদ্দ সম্ভব হবে না, তবে ব্যাপক দারিদ্র্যের শিকার পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরে ওষুধ ও সারে অর্থ বরাদ্দ দিতে পারবে সরকার।

‘খাদ্য আমদানিতে আপাতত বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না, তবে চলতি বছর চরম দরিদ্র ২০ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।’

‘এছাড়া ওষুধ আমদানি খাতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ ব্যাপারটি দেখভাল করছে। দেশের কোনো নাগরিক ওষুধের অভাবে মারা যাবে— এমনটা আমরা চাই না।’

এসএমডব্লিউ