অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম খানিকটা কমলেও চলতি ২০২৩ সালেই তা রেকর্ড ছোঁবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বাজার ও বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত রোজেনবার্গ রিসার্চ তেমনই মনে করে।

স্বর্ণ-রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথরের বাজার ব্যবস্থা বিশ্লেষণকারী সংবাদমাধ্যম কিটকো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ডেভিড রোজেনবার্গ।

কিটকো নিউজকে ডেভিড বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হলো ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি বছর ডলার এবং স্বর্ণ— দু’টোর মূল্যই রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাবে। কারণ যেসব কারণে গত বছর থেকে ডলারের দাম বাড়ছে, সেসবের জের চলতি বছরই শেষ হয়ে যাবে— এমন হওয়া প্রায় অসম্ভব।’

বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা আট মাসেরও বেশি সময় পর চলতি সপ্তাহের সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে খানিকটা কমেছে স্বর্ণের দাম। এ দিন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স=২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) দশমিক ৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৯০৪ ডলার ৮৭ সেন্ট; আর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দশমিক ৬ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার ৯০ সেন্ট।

স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে লাগামহীনভাবে ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছিল স্বর্ণের বাজারেও। ফলে মহামূল্যবান ও আকর্ষণীয় এই ধাতুটির দামও ছিল চড়া।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়ানো নির্দেশ দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম। সেই নীতিরই সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, দাম কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বেড়েছে স্বর্ণ কেনার হারও। গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ কেনা-বেচা সংক্রান্ত সুচকের উন্নতি হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ।

সেই সঙ্গে চাঙাভাব শুরু হয়েছে দেশটির পুঁজিবাজারেও। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটির পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে ৪ শতাংশ।

সাক্ষাৎকারে ডেভিড রোজেনবার্গ বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবার মনযোগের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে কেবল খাদ্য, জ্বালানি ও খুচরা বাজারের মূল্যস্ফীতি। মহামারির সময়, অর্থাৎ ২০২০ থেকে রিয়েল এস্টেটসহ বড় বড় খাতগুলোতে যে ধস নেমেছে— সেসব আমরা লক্ষ্য করছি না।  ২০২৩ সালে রাতারাতি এই ধস কেটে যাবে— এমনটা সম্ভব নয়। রিয়েল এস্টেটসহ বড় খাতগুলোকে ফের পুনরুজ্জীবিত করতে ন্যূনতম একটি নির্দিষ্ট সময় আপনাকে দিতে হবে এবং অবশ্যই সেটির মেয়াদ হতে হবে অন্তত ২ থেকে ৩ বছর।’

‘স্বর্ণের দাম খানিকটা কমেছে— এটা অবশ্যই সুসংবাদ। কিন্তু এটা দীর্ঘসময় টিকবে হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। কারণ সেসব শর্তই এখন উপস্থিত নেই।’

এসএমডব্লিউ