গত কয়েক মাস ধরেই জার্মানিতে কর্মী সংকট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকেরা এসব প্রতিবেদনে কর্মী সংকটের ব্যাপারটি জানিয়েছেন৷

বার্লিনের গাড়ির এক যন্ত্রাংশ বিক্রেতা বলেন, ‘কেউ যদি আবেদন করে আমি আগামীকাল থেকেই তাকে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করতে বলব। এই মুহূর্তে আমাদের উচিত বিশ্বের সব দেশের কর্মীদের স্বাগত জানানো।’

জার্মানির কর্মী সংকটের এই চিত্র সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায়ও বেরিয়ে এসেছে। দেশটির এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, জার্মানিতে প্রতিবছর প্রয়োজন চার লাখ দক্ষ শ্রমিক। এই জরিপটি অবশ্য করা হয়েছিল ইউক্রেনের শরণার্থীদের আসার আগে৷

দক্ষ লোকবলের খোঁজে

জার্মানির কোলন শহরে অবস্থিত ইউরোজব কনলাল্টিং নামে একটি এজেন্সির সহপ্রতিষ্ঠাতা ইয়েরোম লেকট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মীর খোঁজে তার এজেন্সিতে যোগাযোগ করে। ইয়েরোম লেকটের এজেন্সিটি প্রতিবছর দুইশ থেকে পাঁচশ কর্মী সরবরাহ করে জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে

ইয়েরোম লেকট বলেন, ‘কোম্পনির পরিচালক থেকে শুরু করে শ্রমিক অর্থাৎ বিভিন্ন পেশার জন্যই আমাদের কাছে আসে। আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শুধু বিশেষজ্ঞের খোঁজে আমাদের কাছে আসত। কিন্তু এখন আমরা শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক অর্থাৎ নানা ধরনের পেশাজীবী সরবরাহ করে থাকি।’

তবে তার মতে, জার্মানিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত এবং দেশের কর্মী সংকট কাটানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।  

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন

চলমান পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও এসেছে অনেক পরিবর্তন। বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিতে বর্তমানে জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে। তবে এখানেও রয়েছে নানা জটিলতা।

ইয়েরোম লেকট বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর যদি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকে এবং মনে হয় যে এই প্রার্থী আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত তারপরও আপনাকে অনেক কিছু জানতে হবে। যেমন এই ব্যক্তি কীভাবে বাসা খুঁজে পাবে, কীভাবে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবে…এমনকি কীভাবে প্রশাসনিক কাগজপত্র পূরণ করবে সেসব ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে সাহায্য করতে হয়।’

এদিকে জার্মান সরকারও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি কর্মী নিয়োগে উৎসাহিত করছে। দেশটির কর্মসংস্থানমন্ত্রী হুবার্টাস হেইল সম্প্রতি জার্মনির এক টেলিভেশন টকশোতে বলেন, জার্মানির বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে দরকার কর্মীদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ, নারীদের অংশগ্রহণ, যারা বিরতি নিয়েছেন তাদের কাজে ফেরত আসা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন।

‘তবে এসব কিছুর পরও আমাদের যোগ্য অভিবাসী দরকার। যোগ্য কর্মীর ঘাটতি চলতে থাকলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে,’ টকশোতে বলেন মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, চাকরির সন্ধানে গত বছর ১৯ লাখ মানুষ জার্মানিতে এসেছেন। এর মধ্যে ১৬ লাখ এসেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আর তিন লাখ এসেছেন ভারত ও বিভিন্ন বলকান রাষ্ট্র থেকে।

কোন খাতে কত ঘাটতি

বিভিন্ন খাতে লোকবল প্রয়োজন জার্মানির। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমায়) বলছে, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি কর্মী সংকট রয়েছে সমাজকর্মী খাতে। এই খাতে ঘাটতি আছে মোট ২০ হাজার ৫৭৮ জন কর্মীর।

তার পরের অবস্থানেই আছে কিন্ডারগার্টেন বা শিশুদের দেখাশোনা। এই খাতে মোট ঘাটতি  ২০ হাজার ৪৬৬জন।

এছাড়া বৃদ্ধদের দেখাশোনার জন্য মোট ঘাটতি ১৮ হাজার ২৭৯ জনের, ১৬ হাজার ৯৪৭জন ইলেকট্রিসিয়ানের ঘাটতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং নার্সিং খাতে ১৬ হাজার ৮৩৯জন, হিটিং অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং টেকনিসিয়ান ১৪ হাজার ১৩৪জন, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ১৩ হাজার ৬৩৮জন, ফিজিওথেরাপিস্ট ১২ হজার ৬০জন, গাড়ি প্রকৌশলী ১১ হাজার ৭৭১জন এবং পরিবহণ ও লজিস্টিক খাতে ১০ হাজার ৫৬২জন শ্রমিকের ঘাটতির কথা বলা হয়েছে সরকারি পরিসংখ্যানে।

এদিকে জার্মানিতে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য পয়েন্ট সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে দেশটি। আবার বিদেশিদের জার্মানিতে এসে চাকরি খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেও সহজ করতে চায় সরকার৷ কিছু কিছু চাকরির ক্ষেত্রে, যেমন তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ভাষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। আগামী বছর আইনটি পাশের জন্য সংসদে উঠার কথা রয়েছে।

এসএমডব্লিউ