পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামে একটি আঞ্চলিক জোটের বৈঠকে অংশ নিতে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে আমন্ত্রণ জানায় দেশটি।

বৈঠকের এই আমন্ত্রণকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা ভালো হওয়ার ইঙ্গিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বিতর্কিত কাশ্মির অঞ্চলসহ অমীমাংসিত সকল ইস্যুতে ভারতের সাথে আলোচনার আহ্বান জানানোর কয়েকদিন পর বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আগামী মে মাসে ভারতের গোয়ায় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির করা মন্তব্যের জন্য মাত্র এক মাস আগে ভারতে রাস্তায় প্রতিবাদ হয়েছিল। ভারত সেসময় জারদারির মন্তব্যকে ‘অসভ্য’ বলে অভিহিত করে।

এদিকে গোয়ায় আয়োজিত এসসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বিলাওয়াল ভুট্টোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলেও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে কোনও জবাব দেননি।

এসসিওতে বর্তমানে আটটি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। তারা হলো- চীন, ভারত, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। এই সংস্থার চারটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হলো- আফগানিস্তান, বেলারুশ, ইরান এবং মঙ্গোলিয়া। এই চারটি দেশই অবশ্য এসসিও’র পূর্ণ সদস্যপদ পেতে আগ্রহী। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে। পাকিস্তান এই বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি হবেন ১২ বছর পর ভারত সফর করা প্রথম পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রয়টার্স বলছে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তান ও ভারত তিনটি যুদ্ধ করেছে। এর মধ্যে বিতর্কিত কাশ্মির অঞ্চল ছিল উভয় দেশের দু’টি যুদ্ধের মূল কারণ।

ভারত-শাসিত কাশ্মিরে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে থাকে নয়াদিল্লি। তবে ভারতের এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে পাকিস্তান।

অবশ্য ২০১৯ সালের শেষের দিকে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় ভারত একতরফাভাবে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

ভারতের সেই পদক্ষেপের পর থেকে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা স্থগিত রয়েছে। যদিও কূটনীতির মাধ্যমে নানা সময়ে পর্দার পেছনে আলোচনা পুনরায় শুরু করার কিছু প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়েছিল। আর তাই শেহবাজ শরিফ আবারও ভারতের সাথে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে আরব আমিরাতের সহায়তা চেয়েছেন।

টিএম