দুই দশকের বেশি সময় আগের গুজরাট দাঙ্গায় তখনকার মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তৈরি করা ডকুমেন্টারি দেশটিতে ব্যাপক উত্তাপ ছড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দেশটির সরকার ইতোমধ্যে টুইটার ও ইউটিউবকে বিবিসির ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারির লিঙ্ক মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী ও বামপন্থী দলগুলো ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারির প্রদর্শনী আয়োজন করেছে। তবে আয়োজকদের প্রদর্শনীতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বাধা এবং ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠেছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, বুধবার সন্ধ্যার দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসির ডকুমেন্টারির প্রদর্শনীর আয়োজনের পরিকল্পনার দায়ে দিল্লির বিখ্যাত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী একটি দলের সদস্যসহ এক ডজনেরও বেশি ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। এই প্রদর্শনী ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে।

ওই সময় শিক্ষার্থী আন্দোলনকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যানার নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে পুলিশ ধাওয়া করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। নীল দাঙ্গা পোশাকে সজ্জিত পুলিশ সদস্যরা টিয়ার-গ্যাস, জলকামানের ভ্যানসহ দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ক্যাম্পাসের ফটকে পৌঁছেছে।

এনডিটিভি বলছে, কেবল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি এবং অন্যদের ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে, মঙ্গলবার জারি করা এক আদেশে জামিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তারা ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনও ধরনের জমায়েত হতে দেবে না।

দেশটির রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) ছাত্র শাখা স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই) ফেসবুকে ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়ার পর জামিয়া কর্তৃপক্ষ ওই আদেশ জারি করে।

এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ওই ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়ে। ছাত্র ইউনিয়নের অফিসে ইন্টারনেট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় প্রদর্শনীতে বিঘ্ন ঘটে। পরে ফোনে অথবা ল্যাপটপে ডকুমেন্টারি দেখার জন্য শত শত শিক্ষার্থী অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে জড়ো হন। এমন পরিস্থিতিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিবিসির ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে যখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় তখন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভয়াবহ সেই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। মূলত হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয়েছিল।

আল জাজিরা বলছে, বিবিসির ডকুমেন্টারিতে দেখানো যুক্তরাজ্যের তদন্তের প্রতিবেদনটিতে দাঙ্গার ঘটনাকে ‘পদ্ধতিগত সহিংসতা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই সহিংসতায় ‘জাতিগত নির্মূলের সকল বৈশিষ্ট্য’ রয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদির ওপর সরাসরি দায় চাপানো হয়েছে।

তদন্তের তথ্য ডকুমেন্টারিতে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদনটি কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।

মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবিসি ওই ডকুমেন্টারি অনুসারে, ব্রিটিশ তদন্ত দল দাবি করেছে— দাঙ্গার সময় মুসলমানদের ওপর টার্গেট করে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য পুলিশকে কাজ করতে বাধা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এমনকি সূত্রের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, দাঙ্গায় হস্তক্ষেপ না করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে নির্দেশও দিয়েছিলেন মোদি।

তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং ভারতের শীর্ষ আদালতের তদন্তের পরে ২০১২ সালে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া এই অভিযোগ থেকে মোদিকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত আরেকটি পিটিশন গত বছর খারিজ হয়ে যায়।

এসএস