ভারতের প্রভাবশালী এবং সর্ববৃহৎ কোম্পানি আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে গত বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, শেয়ার বাজারে ‘কারচুপি’ এবং প্রতারণা করেছে আদানি গ্রুপ। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারের বড় দরপতন হতে থাকে। এই অব্যাহত দরপতনে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির মোট সম্পত্তি অস্বাভাবিক কমে গেছে। তিনি মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী থেকে সপ্তমস্থানে নেমে গেছেন।

হিন্ডেনবার্গ, আদানির সম্পত্তিতে ধস নামানোর পেছনে কে?

কর্পোরেট বিশ্বে হিন্ডেনবার্গ একটি পরিচিত নাম। এটি কর্পোরেট কোম্পানির অসঙ্গতি এবং অন্যায়গুলো সামনে আনে এবং ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে।

২০১৭ সালে হিন্ডেনবার্গ প্রতিষ্ঠা করেন নাথান অ্যান্ডারসন। এটি একটি ফরেনসিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেটি সম্পত্তির মালিকানা, আর্থিক চুক্তি এবং আমানত বিশ্লেষণ করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, হিন্ডেনবার্গ ‘মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়’ যেমন— আর্থিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং অপ্রকাশিত আর্থিক লেনদেনগুলোর খোঁজ করে থাকে।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম খুঁজে পাওয়ার পর এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ। এরপর আর্থিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে এটি।

আরও পড়ুন>>> ঝড়ের কবলে আদানির সাম্রাজ্য, পতন কী আসন্ন?

হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতার পরিচয়

হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসার ওপর স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ডাটা কোম্পানি ফ্যাক্টসেট রিসার্চ সিস্টেমে। সেখানে তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করেন।

নাথান অ্যান্ডারসন ২০২০ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম ওই আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো খুবই সাধারণ মানের বিশ্লেষণ করছিল। সবগুলো প্রায় একই রকম ছিল।’

নাথান অ্যান্ডারসন তার লিংকডইন অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, ফ্যাক্টসেটে আসার আগে ইসরায়েলে কয়েক মাস অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাজ করেছেন তিনি। আর এ বিষয়টি তাকে ‘প্রচণ্ড চাপ ও কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

অপর এক সাক্ষাৎকারে নাথান অ্যান্ডারসন বলেছিলেন, তার রোল মডেল হলেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হ্যারি মার্কোপোলোস। যিনি বার্নি ম্যাডফের প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস করেছিলেন।  

হিন্ডেনবার্গের সবচেয়ে বড় সাফল্য কোনটি?

এখন পর্যন্ত হিন্ডেনবার্গের সবচেয়ে সাফল্য হলো ২০২০ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা নিকোলা কর্পোরেশনের অসঙ্গতি প্রকাশ করা। নাথান অ্যান্ডারসনের দাবি, নিকোলার অসঙ্গতি ধরে ‘বড় লাভ’ করেছেন তারা।

নাথান অ্যান্ডারসন জানিয়েছেন, নিকোলা কর্পোরেশন তার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে একটি ভুয়া ভিডিও তৈরি করেছিল। ওই ভিডিওতে দেখানো হয়েছিল উচ্চগতিতে নিকোলার ট্রাক রেসিং করছে— এমনকি উঁচু পাহাড় থেকে সাবলিলভাবে নেমে আসছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টনকে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। ২০২১ সালে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সমঝোতা করে।

নিকোলা ২০২০ সালের জুনে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি  হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং কয়েক মাস পর এর ভ্যালু ২৪ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। কিন্তু বর্তমানে এ কোম্পানির ভেল্যু মাত্র ১ দশমিক ৩৪ ডলার। হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে নিকোলার সাবেক কর্মীরা অসঙ্গতি ফাঁস করতে তাদের সহায়তা করেন।

আরও পড়ুন>>>বিশ্বের তৃতীয় ধনীর তকমা হারালেন আদানি

এখন পর্যন্ত কতগুলো কোম্পানিকে লক্ষ্য করেছে হিন্ডেনবার্গ?

হিন্ডেনবার্গের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬টি কোম্পানির অসঙ্গতি ফাঁস করেছে তারা। গত বছর টুইটারের বিরুদ্ধে স্বল্পকালীন কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘকালীন অবস্থান নেয় হিন্ডেনবার্গ।

২০২২ সালে মে মাসে হিন্ডেনবার্গ জানায়, টুইটারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্বল্পকালীন ছিল কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল যদি ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটারের মালিকানা কেনার বিষয়টি থেকে পিছিয়ে যেতেন তাহলে টুইটারের মূল্য কমে যেত। জুলাইয়ে নাথান অ্যান্ডারসন জানান, ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন তারা। এদিকে নানান নাটকীয়তার পর অক্টোবরে ৪৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েই টুইটারের মালিকানা কেনেন মাস্ক।

সূত্র: রয়টার্স

এমটিআই