ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বুধবার দেশটির এই অর্থমন্ত্রী সাড়ে পাঁচশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাজেট ঘোষণা করেছেন। এই বাজেটে সাধারণ মানুষের আয়ের স্তরের নতুন সীমা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; যাতে কোনো আয়কর দিতে হবে না। দেশটির নতুন বাজেট অনুযায়ী, এখন থেকে বছরে ৭ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কর মওকুফ করা হয়েছে।

নতুন আয়কর কাঠামোতে সাত লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কর মওকুফের ঘোষণা করা হলেও এতে বেশ কিছু হিসাবও রয়েছে। আর সেই জটিল হিসাবের রহস্য এখনও ভেদ করতে পারেনি দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

ভারতের এবারের বাজেটে মোট সাতটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যাকে দেশটির অর্থমন্ত্রী ‘সপ্তর্ষি’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই সাতটি বিষয় হল— অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, কৃষিক্ষেত্রে জিজিটাল অবকাঠামো, অবকাঠামো ও বিনিয়োগ, সম্ভাবনার উন্মোচন, গ্রিন গ্রোথ বা স্থিতিশীল বৃদ্ধি, যুবশক্তি এবং আর্থিক ক্ষেত্র।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ভারতের এবারের পাঁচ স্তরের কর কাঠামোতে কী বলা হয়েছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ লাখ রুপি পর্যন্ত বছরে আয় করলে কোনও কর দিতে হবে না। আগের কাঠামো অনুযায়ী আড়াই লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হতো না। ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ রুপি পর্যন্ত বাৎসরিক আয় হলে কর দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাৎসরিক আয় ৬ লাখ থেকে ৯ লাখ হলে একজন বেতনভোগীকে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ। পুরোনো কাঠামোতে এই পর্যন্ত হিসাব একই ছিল।

বাৎসরিক আয় ৯ লাখ থেকে ১২ লাখ রুপির মধ্যে হলে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। যা আগের কর কাঠামো অনুযায়ী ছিল ২০ শতাংশ। ১২ লাখ রুপি থেকে ১৫ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ।

বছরে আয় যদি ১৫ লাখ রুপির বেশি হয় তাহলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে ঘোষণা করেছেন। আগের কর কাঠামোতেও ১৫ লাখ রুপির বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো।

নতুন কর কাঠামোর হিসাব বলছে, কর ধার্য থাকলেও ৭ লাখ পর্যন্ত আয়ে বেতনভোগীদের কোনও কর দিতে হবে না। বছরে ৯ লাখ রুপি পর্যন্ত আয় হলে ৪৫ হাজার রুপি আয়কর দিতে হবে। যা আগে ছিল ৬০ হাজার রুপি। অর্থাৎ আগের তুলনায় কম ২৫ শতাংশ।

আনন্দবাজার বলছে, যে বেতনভোগীর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ রুপি, তাকে দেড় লাখ রুপি কর দিতে হবে। আগে এই করের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার রুপি। ভারতের আগের আয়কর কাঠামো অনুযায়ী, ৫ লাখ পর্যন্ত আয়ে কোনও আয়কর দিতে হতো না। এখন তা বেড়ে ৭ লাখ হয়েছে।

পাশাপাশি ৯ থেকে ১২ লাখ এবং ১২ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত আয়েও কর কমেছে। সেই হিসাব বলছে, নতুন আয়কর কাঠামোতে সুবিদা পাবেন দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণ। 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বেতনভোগী মধ্যবিত্তের আয় ৭ লাখ পর্যন্ত হলে তাকে কোনও আয়কর দিতে হচ্ছে না। যদিও তারা এর মধ্যেই জীবনবীমা এবং দীর্ঘমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের উপলব্ধ ছাড় পাবেন। কিন্তু সেই আয় ৭ লাখ ১ রুপি হলেও তাকে দ্বিস্তরীয় কর দিতে হবে।

অর্থাৎ, ৩ লাখ থেকে ৬ লাখের হিসাবে ৫ শতাংশ অর্থাৎ, ১৫ হাজার রুপি এবং ৬ থেকে ৭ লাখের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার রুপি। আয় ৭ লাখের থেকে এক রুপি বেশি হলেও সেখানে একজন মধ্যবিত্তকে প্রায় ২৫ হাজার কর দিতে হচ্ছে।

আগের কর কাঠামোয় আয় ৫ লাখ রুপি পেরোলেই অর্থাৎ ৫ লাখ ১ রুপি হলে তাকে ৩ থেকে ৬ লাখের হিসাবে ৫ শতাংশ কর দিতে হতো। পাশাপাশি বাড়ির ঋণ-সহ বিভিন্ন বিনিয়োগে মিলত ছাড়। কিন্তু নতুন আয়কর কাঠামোয় বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে কোনও ছাড় মিলবে না।

অর্থাৎ, একজন বেতনভোগী কোথায় কত রুপি বিনিয়োগ করেছেন, তা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা থাকবে না। মোট আয় যত, তার ওপর আয়কর দিতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগের জন্য আলাদাভাবে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।

এসএস