ভারতের বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ ওঠার পর টালমাটাল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন এর শীর্ষ নির্বাহী গৌতম আদানি। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গৌতম আদানির কোম্পানিকে নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে হু হু করে কমছে আদানি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ।

মঙ্গলবার বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে ছিটকে পড়ার পরদিনই আরও বড় ধাক্কার মুখোমুখি হলেন গৌতম আদানি। বুধবার এশিয়ার শীর্ষ ধনীর তকমাও হারিয়েছেন ভারতের আরেক ধনকুবের মুকেশ আম্বানির কাছে। বুধবারের শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধসের কারণে আদানি ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ১৫তম স্থানে নেমে গেছেন।

অন্যদিকে, আদানির পতনের সাথে সাথে ভারতের আরেক ধনকুবের ও  রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ৯ নম্বরে উঠে এসেছেন। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার।

মার্কিন বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস বলছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত কয়েক দিনের মতো আজও আদানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ব্যাপক হারে কমে গেছে। এই হিসেবে এক হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে আদানির সম্পদের পরিমাণ কমে হয়েছে ৭ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। 

গত ২৫ জানুয়ারি ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ তুলে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানির জালিয়াতি নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র তিন দিনে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়।

হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আদানি ছিলেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী।

আদানির ব্যবসার ইনকিউবেটর হিসাবে বর্ণনা করা হয় আদানি এন্টারপ্রাইজকে, বুধবার পুঁজিবাজারে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশ, আদানি টোটাল গ্যাসের ১০ শতাংশ কমেছে।

একই দিনে আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের মূল্য ৬ শতাংশ এবং আদানি বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০ শতাংশ কমেছে। তবে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান টোটালের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা আদানি টোটাল গ্যাস। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার হারিয়েছে।

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ’ রয়েছে; যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়েছে।

অন্যদিকে, আদানি গ্রুপের অভিযোগের জবাবে হিন্ডেনবার্গ বলেছে, এটা পরিষ্কার, আমরা ভারতকে প্রাণবন্ত্র গণতন্ত্র আর চমৎকার ভবিষ্যতের উদীয়মান পরাশক্তি হিসাবে মনে করি। তবে ভারতের ভবিষ্যৎ আদানি গ্রুপের কাছে আটকে আছে; আর জাতিকে পরিকল্পিতভাবে লুণ্ঠন করতে গিয়ে নিজেকে ভারতীয় পতাকায় ঢেকে দিয়েছে আদানি গ্রুপ।

এসএস