উগান্ডার মুসা হাসাহিয়া কাসেরার এত বেশি সন্তান যে তাদের বেশিরভাগের নামই মনে করতে পারেন না তিনি

মুসা হাসাহিয়া কাসেরার এত বেশি সন্তান যে তাদের বেশিরভাগের নামই মনে করতে পারেন না তিনি। আফ্রিকার দেশ উগান্ডার এক গ্রামের বাসিন্দা মুসার বিশাল পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যাপক বেগ পোহাতে হয়। তার সংসারে ১২ জন স্ত্রী, ১০২ সন্তান এবং ৫৭৮ নাতি-নাতনি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশাল এই পরিবারকে এখন তার যথেষ্ট বলে মনে হয়।

পূর্ব উগান্ডার প্রত্যন্ত এক গ্রামীণ এলাকা বুতালেজা জেলার বুগিসা গ্রামে নিজ বাড়িতে বসে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একের পর এক বিয়ে আর শত সন্তান, নাতি-নাতনিকে নিয়ে গড়ে তোলা বিশাল পরিবারের গল্প বলেছেন তিনি। ৬৮ বছর বয়সী এই উগান্ডার নাগরিক বলেন, প্রথম দিকে, এটা কিছুটা রসিকতাই ছিল... কিন্তু এখন এর সমস্যা আছে।

‘এখন আমার শরীর খারাপ হয়ে গেছে। এত বিশাল পরিবারের জন্য আমার মাত্র দুই একর জমি আছে। আমি খাদ্য, শিক্ষা, পোশাকের মতো মৌলিক জিনিসগুলো তাদের দিতে পারছি না। যে কারণে আমার দুই স্ত্রী ইতিমধ্যে চলে গেছেন।’

বর্তমানে বেকার হলেও বুগিসা গ্রামে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন মুসা। তিনি বলেন, পরিবার যাতে আর বড় না হয়, সেজন্য তার স্ত্রীরা এখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন।

‘আমার স্ত্রীরা গর্ভনিরোধক ব্যবহার করছেন, কিন্তু আমি করি না। আমি আর সন্তানের আশা করি না। কারণ আমি আমার এত সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমি তাদের সবার দেখভাল করতে পারি না।’

মুসার সন্তানরা উগান্ডার বুগিসা গ্রামের জীর্ণ-শীর্ণ বাড়িতে বসবাস করে। এই বাড়ির লোহার ছাদে মরিচা ধরেছে। কাছাকাছি এলাকায় আরও প্রায় দুই ডজন ঘাসে ছাওয়া মাটির কুঁড়েঘর রয়েছে; যেখানে তার সন্তানরা থাকে।

১৯৭২ সালে ঐতিহ্যবাহী এক অনুষ্ঠানে প্রথম স্ত্রীকে বিয়ে করেন মুসা। তখন মুসা ও তার স্ত্রীর বয়স ছিল ১৭ বছর। বিয়ের এক বছর পর তার প্রথম সন্তান স্যান্দ্রা নাবওয়ারের জন্ম হয়।

মুসা বলেন, ‘আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুরা আমাকে পারিবারিক উত্তরাধিকারের সম্প্রসারণে অনেক সন্তানের জন্ম ও অনেক বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।’

‘কোনও বিবাদ নেই’

গরু ব্যবসায়ী এবং কসাই হিসেবে মুসার তৎকালীন খ্যাতিতে আকৃষ্ট হয়ে গ্রামের লোকজনও তাদের মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতেন। এমনকি ১৮ বছরের কমবয়সী মেয়েকেও মুসার হাতে তুলে দিতেন গ্রামবাসীরা।

উগান্ডায় বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৯৫ সালে। ওই সময় পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বহুবিবাহের অনুমতিও ছিল। মুসার সংসারে বর্তমানে রয়েছে ১০২ সন্তান; যাদের বয়স ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। আর তার সবচেয়ে কনিষ্ঠ স্ত্রীর বয়স বর্তমানে ৩৫ বছর।

সন্তানদের শনাক্ত করতে তাদের মায়েরাই আমাকে সাহায্য করেন, বলেন মুসা

‘চ্যালেঞ্জের বিষয় হল আমি কেবল আমার প্রথম এবং শেষ সন্তানের নাম মনে করতে পারি। কিন্তু কিছু সন্তানের নাম আমি একদমই মনে করতে পারি না,’ সন্তানদের জন্মের বিবরণ জানতে পুরোনো নোটবুকের স্তূপ তন্ন তন্ন করে খোঁজার সময় বলেন মুসা।

তিনি বলেন, ‘সন্তানদের শনাক্ত করতে তাদের মায়েরাই আমাকে সাহায্য করেন।’

মুসা তার কয়েকজন স্ত্রীর নামও এখন আর মনে করতে পারেন না। স্ত্রী বা সন্তানদের নাম জানার জন্য ছেলে শাবান মাগিনোর সহায়তা নিতে হয় তাকে। মুসার সন্তানদের মধ্যে যে অল্প কয়েকজন শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন শাবান তাদের একজন। ৩০ বছর বয়সী শাবান একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক; যিনি পরিবারের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনায় সাহায্য করেন।

ব্শিাল এই পরিবারে ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা করার জন্য প্রত্যেক মাসে একবার পারিবারিক বৈঠক হয় বলে জানান মুসা। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বুগিসা গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার। তিনি বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মুসা তার ‘সন্তানদের বেশ ভালোভাবে লালনপালন করেছেন’ এবং উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তার সন্তানরা কোনও চুরি অথবা মারামারি করেননি।

‘খাবারে টান’

স্ত্রীরা কেন তাকে ছেড়ে যাননি, এএফপির এমন এক প্রশ্নের জবাবে মুসা বলেন, ‘তারা সবাই আমাকে ভালোবাসে। আপনি দেখছেন, তারা সুখী।’

বুগিসার বাসিন্দারা মূলত ধান, কাসাভা, কফির চাষ করেন। গবাদি পশু পালনের জন্য ছোট পরিসরে ফসল চাষাবাদের সাথেও জড়িত তারা। মুসার পরিবারের অনেক সদস্য তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে অর্থ উপার্জন অথবা খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কাঠ এবং পানি সংগ্রহ করেন।

আর বাড়িতে যারা থাকেন, তাদের কেউ বসে, খোশগল্প করে কিংবা গাছের ছায়ায় কার্ড খেলে সময় পার করেন। অন্যদিকে, বাড়ির নারীদের মধ্যে কেউ কেউ মাদুর বুনেন কিংবা পরস্পরের মাথার চুলে বিলি কেটে দেন।

দুপুরের মধ্যাহ্নভোজে থাকে স্থানীয় সিদ্ধ কাসাভা। এই খাবার যখন প্রস্তুত হয়ে যায় তখন মুসা কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে আসেন; যেখানে তার দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের খাবারের জন্য ডাকেন। মুসার ডাকে পরিবারের সদস্যরা খাবার সংগ্রহের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়।

মুসার তৃতীয় স্ত্রী জেবিনা বলেন, ‘‘কিন্তু খাবার পর্যাপ্ত নয়। আমরা বাচ্চাদের দিনে একবার কিংবা দু’বার ভালো খাওয়াতে বাধ্য হই।’’

তিনি বলেন, যদি জানতেন যে মুসার আরও স্ত্রী আছে, তাহলে তিনি তাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন না। হতাশ কণ্ঠে জেবিন বলেন, এমনকি আমি এখানে এসে যখন সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম... তারপরও সে চতুর্থ, পঞ্চম বিয়ে করল। সেটি গিয়ে ঠেকল ১২তম বিয়েতে।

মুসার দুই স্ত্রী ইতিমধ্যে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া বাড়ি জনাকীর্ণ হওয়ায় অন্য তিন স্ত্রী মুসার বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের এক শহরে বসবাস করছেন। স্ত্রীরা কেন তাকে ছেড়ে যাননি, এএফপির এমন এক প্রশ্নের জবাবে মুসা বলেন, ‘তারা সবাই আমাকে ভালোবাসে। আপনি দেখছেন, তারা সুখী।’

সূত্র: এএফপি।

এসএস