রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র যত বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে, রাশিয়া তত বেশি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে। এমনকি সেই হামলা পারমাণবিক অস্ত্রে গিয়েও ঠেকতে পারে।

সাংবাদিক নাদানা ফ্রাইদ্রিখসনকে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাত্কারে মেদভেদেভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল কিয়েভের অধীনে আছে, তার সবগুলোই পুড়বে।’

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণ শুরুর পর থেকে যুদ্ধের পক্ষে কথা বলে আসছেন। দীর্ঘপাল্লার অস্ত্রের ব্যবহার রাশিয়াকে কিয়েভের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারে কিনা, নাদানা ফ্রাইদ্রিখসনের এমন প্রশ্নের জবাবে মেদভেদেভ বলেছেন, ফলাফল হবে এর কেবল উল্টো।

ফ্রাইদ্রিখসন এই সাক্ষাৎকার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করেছেন বলে শনিবার জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মেদভেদেভ বলেছেন, কেবল নৈতিক দিক থেকে পাগলরাই এই ধরনের তর্ক করতে পারেন। আর এ ধরনের মানুষ হোয়াইট হাউজ ও ক্যাপিটলে অনেক আছেন।

ইউক্রেনকে ২ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার পেন্টাগন বলেছে, এই প্যাকেজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নতুন রকেট দেওয়া হচ্ছে; যা ইউক্রেনের আক্রমণের পরিসীমা দ্বিগুণ করবে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর বর্ষপূর্তির আগে রুশ সৈন্যরা গত ৮ মাস ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এমনকি ইউক্রেনের চারটি প্রদেশের কোনোটিরই পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি রুশ সৈন্যরা। যদিও এসব প্রদেশের কিছু অংশ একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে মস্কো।

পশ্চিমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়া লড়াই করছে যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি ইউক্রেনের দখলে নেওয়া ভূখণ্ড কখনই ফেরত দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে মস্কো। অন্যদিকে কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার আলোচনার জন্য উন্মুক্ত নয়।

মেদভেদেভের মতো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও কয়েকবার ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড এবং জনগণকে রক্ষায় প্রয়োজনে সব অস্ত্রের ব্যবহার করবে রাশিয়া।

ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে যে অস্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ বা রাশিয়ার গভীরে আঘাত করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মেদভেদেভ বলেন, বিষয়টি স্পষ্টভাবে মোকাবিলা করবেন পুতিন।

‘আমরা নিজেদের কোনও সীমা নির্ধারণ করি না। হুমকির ধরনের ওপর নির্ভর করে, আমরা সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত। আর এটি হবে পারমাণবিক প্রতিরোধের মৌলিক বিষয়সহ আমাদের মতবাদের নথি অনুযায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমাদের জবাব হবে দ্রুত, কঠোর এবং বিশ্বাসযোগ্য।’

রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদে ‘রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের’ পর পারমাণবিক হামলার অনুমতি দেওয়া হয়।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস