ভোর ৪টা ১৭ মিনিট। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গজিয়ানতেপ নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন আরদেম। তুরস্কের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে মুহূর্তের মধ্যে তার ঘুম ভেঙে যায়।

তিনি বলেন, আমার ৪০ বছরের জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনই দেখিনি। আমরা অন্তত তিনবার অত্যন্ত জোরালভাবে কেঁপে উঠলাম। ঠিক যেভাবে দোলনায় শিশুরা দোল খায়।’

আরদেম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বাঁচার জন্য লোকজন তাদের গাড়িতে পালিয়ে যান। আমার ধারণা গজিয়ানতেপের কোনও বাড়িতে একজন মানুষও আর নেই।’

গজিয়ানতেপ থেকে ১৩০ মাইলেরও বেশি পশ্চিমের শহর আদানায় বসবাস করেন নিলুফার আসলান। আজকের এই ভূমিকম্পে যখন তাদের পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে ওঠে তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই মারা যাবেন, এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন নিলুফার।

তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনও দেখিনি। আমরা প্রায় এক মিনিটের জন্য দুলছিলাম। তখন আমি পরিবারের সদস্যদের বললাম, ভূমিকম্প হচ্ছে। চল সবাই একসাথে মরি... এই বিষয়টিই তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।’

ভূমিকম্প থেমে যাওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন আসলান। তিনি বলেন, আমি কোনোকিছু সাথে নিতে পারিনি। কেবল জুতো পরেই বাইরে চলে এসেছি। আমাদের ভবনের আশপাশের অন্তত চারটি ভবন একেবারে ধ্বংস হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গজিয়ানতেপ থেকে ৩০০ মাইল পূর্বের দিয়ারবাকির এলাকায় উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার জন্য রাস্তায় ছুটে আসেন লোকজন।

৩০ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, সর্বত্রই চিৎকার। আমি হাত দিয়ে পাথর সরাতে শুরু করলাম। আমরা বন্ধুদের সহায়তায় আহতদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু আর্তনাদ থামছে না। এরপর উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আসেন।

শহরের অন্য একটি এলাকায় মুহিতিন ওরাক্কি নামের এক ব্যক্তির পরিবারের সাত সদস্য চাপা পড়েছেন বলে জানান তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, আমার বোন এবং তার তিন সন্তানও চাপা পড়েছে। এবং তার স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়িও চাপা পড়েছেন।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জিয়াদ হাগে তাহা বলেন, বিপর্যয়ের পর আহত ব্যক্তিরা ঢেউয়ের মতো ছুটে আসছেন।

এসএস