১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে অভিহিত করে তাচ্ছিল্য করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর বাংলাদেশ কিসিঞ্জারকে চূড়ান্ত রকমের ভুল হিসেবে প্রমাণ করে চলেছে।

প্রায় নয় বছর আগে ইকোনোমিক পলিসি রিসার্স ফাউন্ডেশন অব তুর্কিতে (টিইপিএভি) যখন দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে কাজ করছিলাম তখনই অঞ্চলটি নিয়ে আমার মুগ্ধতার শুরু। ইস্তাম্বুল-জাহিদান-ইসলামাবাদ ট্রেনের ধারণাটি তখনই প্রথম আলোচনার টেবিলে উঠেছিল। 

এখন ওই ‘ইকো ট্রেন’— ইকোনোমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্ট যাকে এই নামেই বর্ণনা করা হয়েছে— অবশেষে তার কার্যক্রম শুরু করেছে।

ব্লক হিসেবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম অর্থনৈতিকভাবে সংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। অঞ্চলটির সব দেশই বহিঃর্বিশ্বের সাথে ব্যাপক বাণিজ্য করলেও তাদের নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য হয় কম। দেশগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগ না থাকা অবশ্য এর কারণ নয়। তাহলে কেন তারা বাণিজ্য করছে না? কারণ এই অঞ্চলটির দেশগুলোর অনেক রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে।  

তবে এই কঠিন অঞ্চলে একদা পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। ওই বছরের শুরুর দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণটি আমরা মনে পড়ে। যে ভাষণ দেশটিকে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করেছিল। এটা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষের আহ্বান। বিশ্বের মধ্যে আমাদের এই অঞ্চলে যে ‘পাখির ডাক’ এখনো বিরল।

আজ, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উচ্চ-প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে।  উন্নতিতে দেশটি প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও ভালো করছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তার নিজস্ব একটি শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। মনে রাখবেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হওয়ার নিশ্চিততম একটি উপায় হলো শিল্পের বিকাশ। এটাই আমার আলোচনার প্রথম পয়েন্ট।

দ্বিতীয়ত, তুরস্কেরও অনেক আগে থেকে অর্থাৎ ২০১৫ সাল থেকেই বাংলাদেশের একটি ‘ঘোড়া’ রয়েছে। এই ঘোড়াটির নাম হলো পাঠাও; যা উবারের মতোই একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। সুতরাং, দেশটি যে কেবল টেক্সটাইল খাতেই নয় গুরুত্বপূর্ণ আইসিটি স্টার্টআপ খাতেও ভালো উন্নতি করেছে তার প্রমাণ তাদের তৈরি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও। 

এখন নিশ্চয় আপনি বাংলাদেশ কীভাবে হেনরি কিসিঞ্জারকে ভুল প্রমাণিত করছে তার তৃতীয় কারণটি খুঁজছেন। তাহলে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন সূচকের দিকে তাকান। পনেরো কোটিরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম সারির মানব উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে নিজেদের নাম লিখিয়েছে ওই বছর। 

১৯৯০ সালে ইউএনডিপি যখন প্রথম তাদের মানব উন্নয়ন সূচক প্রকাশ করে তারপর থেকে বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের স্কোরে ৬০ শতাংশের বেশি উন্নতি ঘটেছে। আমি এটাকে সাফল্যের একটা গল্প হিসেবে অভিহিত করতে চাই। ওহ আচ্ছা, কিসিঞ্জার মহাশয় বোধহয় ওই সময় চীনের প্রতি এত বেশি মনযোগী ছিলেন যে বাংলাদেশের এই অপার সম্ভাবনা তার চোখে পড়েনি। 

স্বত্ব: তুরস্কের জাতীয় দৈনিক হুরিয়াত, অনুবাদ: আহমেদ সজীব

গভেন সাক: ইকোনোমিক পলিসি রিসার্স ফাউন্ডেশন অব তুর্কির ব্যবস্থাপনা পরিচালক

এএস