যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে গত বছর ছুরি হামলার শিকার হয়েছিলেন বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি। আকস্মিকভাবে হওয়া এই হামলা এতোটাই গুরুতর ছিল যে রুশদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ভেন্টিলেটরে পর্যন্ত নিতে হয়।

এই হামলার জেরে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও রুশদির ওপর হামলাকারী ব্যক্তির প্রশংসা করে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে একটি ইরানি ফাউন্ডেশন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছুরি হামলা করে ঔপন্যাসিক সালমান রুশদিকে গুরুতর আহত করায় হামলাকারী ব্যক্তির প্রশংসা করে ইরানি এক ফাউন্ডেশন বলেছে, তারা তাকে (হামলাকারীকে) ১ হাজার বর্গ মিটার কৃষি জমি দিয়ে পুরস্কৃত করবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে মঙ্গলবার এই খবর জানিয়েছে।

গত বছরের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম নিউইয়র্কে একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিউ জার্সির ২৪ বছর বয়সী এক আমেরিকান শিয়া মুসলিম সালমান রুশদির ওপর হামলা করেন। মারাত্মক ওই হামলার পর ৭৫ বছর বয়সী রুশদি তার একটি চোখ এবং একটি হাত হারান।

ফাউন্ডেশন টু ইমপ্লিমেন্ট ইমাম খোমেনি’স ফাতওয়াস বা ইমাম খোমেনির ফতোয়া বাস্তবায়নের ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইসমাইল জারেই বলেছেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে তরুণ আমেরিকান ওই যুবকের সাহসী পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ সে হামলা করে রুশদির একটি চোখ অন্ধ করে এবং তার একটি হাত অক্ষম করে মুসলমানদের খুশি করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রুশদি এখন জীবিত মৃত ছাড়া আর কিছু নয় এবং এই সাহসী পদক্ষেপকে সম্মান জানাতে প্রায় এক হাজার বর্গ মিটার কৃষি জমি ওই ব্যক্তি বা তার কোনো আইনি প্রতিনিধিকে দান করা হবে।’

মূলত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বহু বছর ধরেই  সালমান রুশদি কট্টর ইসলামপন্থিদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। গত বছরের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান চলাকালেই তার ওপর হামলা হয়। হামলার পর পুলিশ হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বাসিন্দা।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। সেসময় রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।

তবে সন্দেহভাজন এই আততায়ী রুশদির ওপর হামলা করতে ১৯৮৯ সালের সেই আদেশ বা ফতোয়া দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আটকের পর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাদি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে যা বলতে পারি তা হলো- আমি আয়াতুল্লাহকে সম্মান করি। আমি মনে করি তিনি একজন মহান ব্যক্তি।’

উল্লেখ্য, আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ হয়, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বই প্রকাশের পর প্রায় ১০ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।

পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর সামনে না এগোলেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দিয়েছিল।

টিএম