আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলীয় কাবো ডেলগাদো প্রদেশে হামলা চালিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র জঙ্গিরা। সম্প্রতি সেখানকার বেশ কিছু গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। ওই সময় যে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে; তাদের মধ্যে ১১ বছরের নিচের শিশুও রয়েছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এই দাতব্য সংস্থা বলেছে, মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলের মানবিক সঙ্কট পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে গুরুতর আকার ধারণ করছে। কাবো ডেলগাদো প্রদেশে ইসলামি চরমপন্থী বিদ্রোহীদের সহিংসতায় প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ওই অঞ্চলে জঙ্গিদের তাণ্ডবের শিকার শোকগ্রস্ত অনেক পরিবারের স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন সেইভ দ্য চিলড্রেনের কর্মীরা। তারা বলছেন, বিদ্রোহীরা ১১ বছরের নিচের শিশুদেরও শিরশ্ছেদ করেছে।

মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি বলছে, গত বছর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অন্তত ১০ লাখ মানুষের খাদ্য এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তার দরকার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাস্তুচ্যুতদের বৃহৎ একটি অংশ জাতিসংঘের ত্রাণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বাস্তুচ্যুতদের মাঝে পানি, খাবার এবং স্যানিটেশনের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এবং ইভেন্ট ডেটা প্রোজেক্টের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে মোজাম্বিকে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

শিরশ্ছেদের শিকার এক শিশুর মা সেইভ দ্য চিলড্রেনকে বলেছেন, জঙ্গিদের হামলার সময় বাড়ি থেকে একটু দূরে লুকিয়ে ছিলেন তারা। এ সময় জঙ্গিরা তার ১২ বছরের ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে শিরশ্ছেদ করে। এই দৃশ্য চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না বলে জানান ওই মা।

মোজাম্বিকের সশস্ত্র জঙ্গিদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এক প্রতিবেদনে সেইভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, মোজাম্বিকের বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে তারা। সেখানকার গ্যাস-সমৃদ্ধ কাবো ডেলগাদো প্রদেশে জঙ্গিদের হাতে সাধারণ মানুষের রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা পেয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মা বলেছেন, তার বড় ছেলেকে শিরশ্ছেদ করেছে জঙ্গিরা। অন্য সন্তানদের নিয়ে তিনি যেখানে লুকিয়ে ছিলেন; তার একেবারে পাশেই বড় ছেলেকে হত্যা করা হয়। সেই রাতে আমাদের গ্রাম আক্রান্ত হয় এবং বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

মোজাম্বিকে সেইভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর চান্স ব্রিগস বলেন, শিশুদের ওপর হামলার খবর আমাদের অসুস্থ করে তুলছে।

‌‘এটা যখন শুরু হয়, তখন আমার চার সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ছিলাম। আমরা জঙ্গলে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার বড় ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় এবং শিরশ্ছেদ করে। আমরা কিছুই করতে পারি নাই। কারণ আমাদেরও হত্যা করা হতো।’ 
 
অপর এক নারী বলেন, তিন সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জঙ্গিরা তার এক ছেলেকে ধরে নিয়ে শিরশ্ছেদ করে। তিনি বলেন, ‘আমার ১১ বছরের ছেলেকে হত্যা করার পর আমরা বুঝতে পারি যে, এই গ্রামে অবস্থান করা আর নিরাপদ হবে না। অন্য একটি গ্রামে আমার বাবার বাড়িতে পালিয়ে যাই। কিন্তু কয়েকদিন পর সেই গ্রামেও হামলা হয়।’

সূত্র: এপি, বিবিসি।

এসএস