এখন পর্যন্ত ভারতে বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত কোনো রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে গত প্রায় তিন বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে এই রোগে পাখিরা আক্রান্ত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এতে জনগণের একাংশের মধ্যে খানিকটা আতঙ্কেরও সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই আতঙ্ককে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, লোকজন যদি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হাঁস-মুরগির মাংস ও ডিম খাওয়া বন্ধ রাখেন— তাহলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না।

এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণভাবে পরিচিত বার্ড ফ্লু মূলত পাখিদের রোগ। এইচ৫এন৮ নামের একটি ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী।আক্রান্ত পাখির মাংস ও ডিম পরিপূর্ণভাবে সেদ্ধ না করে খেলে মানুষেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে পাখি থেকে সরাসরি মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত ঘটে না।

এতদিন পর্যন্ত এ ব্যাপারটি বজায় থাকলেও ২০২০ সাল থেকে গত কয়েকবছর ধরে সিক্রয় আছে মূল এইচ৫টএন৮ ভাইরাসেরই একটি ধরন এইচ৫এন১। এই ধরনটি মূল ভাইরাসের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং এটির প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক জন মানুষের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (রিমস) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. অশোক কুমার শর্মাও এ ব্যাপারটিই উল্লেখ করেছেন। ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. শর্মা বলেন, ‘এটা সত্য যে বার্ড ফ্লু ভাইরাস তাপ সহ্য করতে পারে না এবং আক্রান্ত পাখির মাংস বা ডিম যদি পূর্ণরূপে সেদ্ধ করা হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েকজন জীবিত পাখি থেকে সরাসরি এই ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। লোকজন যদি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মুরগি-হাঁসের মাংস ও ডিম খাওয়া বন্ধ রাখেন, সেক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নেই।’

গত ২০২০ সাল থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে গৃহপালিত ও বন্য বিভিন্ন পাখি। সম্প্রতি দিল্লিতেও বুনোপাখি ও গৃহপালিত হাঁস-মুরগী বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কোনো মানুষ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত না হলেও পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত— এমন মনে করার উপায় নেই বলে মনে করেন রিমসের সোশ্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবেশ কুমারও। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘মানুষ ও পশুপাখির ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো ‘প্রবাহ ও স্থানান্তর’ নীতি মেনে চলে। ফলে দ্রুত ও সহজেই এই ভাইরাসগুলোর মিউটেশন ঘটে এবং এই প্রক্রিয়ার কারণে ভাইরাসগুলো যে কোনো সময় মানবদেহে সংক্রণ করার ক্ষমতাও অর্জন করতে পারে— এটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।’

‘প্রতিকারের যে প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। এ কারণে মাংস-ডিম খাওয়ায় বিরতির পাশাপাশি দেশের পোলট্রি খামারগুলোতে নজরদারি বাড়ানোও জরুরি’, টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন ড. দেবেশ কুমার।

এসএমডব্লিউ