চীনের সহায়তায় মার্চেই মিলবে আইএমএফের ঋণ, আশা শ্রীলঙ্কার
দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা, চলতি মার্চ মাসেই তা ছাড় হতে পারে বলে আশা করছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে বিক্রমাসিংহে বলেন, চলতি মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহেই মিলবে আইএমএফের ঋণের কিস্তি। শ্রীলঙ্কার বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মূলত চীন সমর্থন দেওয়ার কারণেই আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে— উল্লেখ করে পার্লামেন্ট ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘(ঋণ প্রদানের জন্য) আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার প্রতিটিই আমার মেনে চলেছি। সোমবার লেটার অব ইনটেন্টের মাধ্যমে আমরা এই ব্যাপারটি লিখিত ভাবে আইএমএফকে জানিয়েছিও।’
>> বাড়ছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, ধর্মঘট নিষিদ্ধ করল শ্রীলঙ্কা
বিজ্ঞাপন
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকও শ্রীলঙ্কার পক্ষে সুপারিশ করে এইদিন আইএমএফের কাছে চিঠি দিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘চীনের পাশাপাশি ভারত এবং ঋণদাতা দেশগুলোর প্রভাবশালী সংস্থা প্যারিস ক্লাবও আমাদের পক্ষে সুপারিশ করেছে। আশা করছি, আগামী তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যেই আইএমএফ আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে ঋণের কিস্তি ছাড় দেওয়া শুরু করবে পাবো আমরা।’
করোনা মহামারি ও বিগত রাজাপাকসে সরকারের আর্থিক অনিয়ম-অপব্যয়, ত্রুটিপূর্ণ করনীতির জেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত প্রায় শূন্য পর্যায়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কার। ফলে, ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র গত বছর থেকে অভূতপূর্ব অর্থ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এত গভীর অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা।
গত বছরের মে মাসে জনবিক্ষোভ তীব্র পর্যায়ে পৌঁছানোর পর পার্লামেন্ট সদস্য রনিল বিক্রমাসিংহেকে অর্থমন্ত্রী করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তারপর ওই বছরই জুলাই মাসে দিকে বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পলায়ন করার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন বিক্রমাসিংহে। সেই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ও নিজের দায়িত্বে রাখেন।
গোতাবায়া গোপনে দেশ ছেড়েছিলেন গত বছর ১৩ জুলাই। তার এক সপ্তাহ আগে, ৬ জুলাই অর্থমন্ত্রী রনিল ঘোষণা করেন— দেউলিয়া হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে চীন ও ভারতের কাছ থেকে। দেউলিয়া ঘোষণার পর সেসব বিদেশি ঋণ কীভাবে পরিশোধ করা হবে— সেই প্রশ্ন দেখা দেয়। বকেয়া ঋণের কিস্তি প্রদানে একটি নতুন কর্মসূচিও প্রণয়ন করে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।
আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা এ পর্যন্ত ঋণ নিয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার, ভারতের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণও ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিকে চীন এবং ভারত— উভয়ই শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে। চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক শ্রীলঙ্কাকে বকেয়া ঋণের কিস্তি প্রদান থেকে দুই বছরের অব্যাহতি দিয়েছে। ভারতও বিভিন্ন ভাবে অব্যাহত রেখেছে দেশটির প্রতি তার সমর্থন।
এসএমডব্লিউ