করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন ঘটায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রসূতি এবং শিশুমৃত্যুর ঘটনা গত বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা থমকে যাওয়ায় এই অঞ্চলে মহামারির সময় অন্তত ২ লাখ ৩৯ হাজার মা ও শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার চিত্রের ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এই কয়েকটি দেশে ১৮০ কোটি মানুষের বসবাস। মহামারির সময় নারী, শিশু এবং সদ্যজাত শিশুর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসে দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং এক লাখ ৮৬ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এই মহামারি কঠোর লকডাউন ব্যবস্থার মাধ্যমে মোকাবেলা করেছে। লকডাউনের সময় হাসপাতাল, ফার্মেসি এবং মুদি দোকান ছাড়া অন্য প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল।

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ‌‘ডিরেক্ট অ্যান্ড ইনডিরেক্ট ইফেক্টস অব কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড রেসপন্স ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে লকডাউনের সময় দেশগুলোর সরকারের নেওয়া কৌশল স্বাস্থ্যসেবা, সমাজসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে সেবিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশ এবং নেপালে তীব্র অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের চিকিৎসা নেওয়ার হার ৮০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে শিশুদের টিকাদানের হার কমে গেছে ৩৫ শতাংশ। ভারত এবং পাকিস্তানে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারিতে শিশুদের পুষ্টি ও অন্যান্য টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার ওই ছয় দেশে পাঁচ বছরের নিচের অন্তত ২ লাখ ২৮ হাজার শিশুর অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। মহামারিতে দেশটিতে শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশে। এরপরই আছে বাংলাদেশ; ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে, মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রীলঙ্কায়— ২১ দশমিক ৫ শতাংশ; পাকিস্তানে এই হার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।

দারিদ্রতা এবং জন্মনিরোধক সামগ্রীর ঘাটতির কারণে গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৫ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটেছে; যার প্রায় ৪ লাখই কিশোরী।

সূত্র : বিবিসি, ইউনিসেফ।

এসএস