রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের সমালোচনা করায় দেশটির এক শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি আদালত এই রায় দেয়।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন এবং এর জেরেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের সমালোচনা করে দেওয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য এক ছাত্রকে সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মস্কোর একটি আদালত। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য রাশিয়ায় শাস্তির মুখোমুখি হওয়াটা খুবই সাধারণ এবং শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ডের এই ঘটনা দেশটিতে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্র্যাকডাউনের সর্বশেষ পদক্ষেপ।

এপি বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধের সমালোচনা করে কারাদণ্ড পাওয়া ওই রুশ শিক্ষার্থীর নাম দিমিত্রি ইভানভ। ২৩ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীকে রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

মূলত রাশিয়ার নতুন একটি আইনের অধীনে রুশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ২০২২ সালে মস্কো ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর এক সপ্তাহ পর রুশ আইন প্রণেতারা এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন।

রাশিয়ার সরকার ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে এবং যারা সরকারি এই বক্তব্যকে মানতে চান না তাদের বিরুদ্ধেই মূলত এই আইনটি  ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী দিমিত্রি ইভানভ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনটি রাশিয়ার অনেক বিরোধী রাজনীতিকের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছে।

রাশিয়ার অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনীতিবিদ ইলিয়া ইয়াশিন সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে জেল খাটছেন, এবং ভ্লাদিমির কারা-মুর্জা নামে আরও এক রাজনীতিক বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধেও সামরিক বাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এপি বলছে, ইভানভকে তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বেশ কয়েকটি পোস্টের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে একটি ‘যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিক, বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালানোসহ বুচা, ইরপিন ও কিয়েভের শহরতলিতে যুদ্ধাপরাধ করার বিষয়ে কথা বলেছিলেন।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই পোস্টের পরই ২০২২ সালের এপ্রিলে ইভানভকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ইভানভ লোমোনোসভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এমএসইউ (MSU) নামেও পরিচিত।

তিনি প্রোটেস্ট এমএসইউ নামে একটি জনপ্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেল চালাতেন। রাশিয়ায় আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনের পাশে একটি নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ কভার করার জন্য এই চ্যানেলটি ২০১৮ সালে চালু করা হয়েছিল।

এপি বলছে, গ্রেপ্তারের পর ইভানভকে প্রথমে একটি অননুমোদিত সমাবেশ আয়োজনের অভিযোগে ১০ দিনের জন্য জেলে রাখা হয়েছিল। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে ২৫ দিনের জন্য একই অভিযোগে আবারও জেলে পাঠায় এবং তারপরে তাকে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এছাড়া পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী তার ফাইনাল পরীক্ষা মিস করেন এবং এমনকি তিনি নিজের চূড়ান্ত গবেষণাপত্রও জমা দিতে ব্যর্থ হন। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অবশ্য ইভানভের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, যেহেতু কর্তৃপক্ষ ইভানভের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোতে মিথ্যা তথ্য থাকার বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য কর্মকর্তাদের বিবৃতি ব্যবহার করেছে, তাই তাদের আদালতে জবানবন্দি দেওয়া উচিত।

এদিকে রায়ের আগে গত সপ্তাহে আদালতে নিজের চূড়ান্ত বক্তব্যে ইভানভ তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। সেসময় তিনি বলেন, যে অপরাধের জন্য তাকে বিচার করা হচ্ছে, আসলে সেগুলোর ‘কোনও অস্তিত্ব নেই’।

টিএম