টানা লোডশেডিং, পাকিস্তানে বিদ্যুৎ স্টেশন ঘেরাও জনতার
টানা লোডশেডিংয়ের জেরে পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার উপজাতি অধ্যুষিত শহর মোহমান্দের বিদ্যুৎ স্টেশন ঘেরাও করে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন জনগণ। জনবিক্ষোভের জেরে বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে পেশোয়ার-বাজাউর রোড।
বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী ‘ইলেকট্রিসিটি অ্যাকশন কমিটি’র নেতাদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকা ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের জেরে নাকাল হচ্ছেন মোহমান্দের বাসিন্দারা। শহরের সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকাগুলোর পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেসব এলকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না বলে জানিয়েছেন কমিটির নেতারা।
বিজ্ঞাপন
ইলেকট্রিসিটি অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ জনতা মঙ্গলবার এই স্টেশনটি ঘেরাও করে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। তারা বলেন, মোহামান্দবাসীকে তাদের বিদ্যুতের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্টেশনের সামনে তারা স্থায়ী অবস্থান নেবেন বলে হুঁশিয়ারিও দেন।
মঙ্গলবার তাদের বিক্ষোভের কারণে মোহমান্দ শহরের সব মার্কেট-বাজার ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে পেশোয়ার-বাজাউর রোড বন্ধ ছিল। এই রোডের এক প্রান্তে অবস্থিত ঘালানি গ্রিড স্টেশন। এই স্টেশন থেকেই মোহমান্দ ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশ চলাকালে অবশ্য কয়েক জন উত্তেজিত বিক্ষোভকারী স্টেশনের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কমিটির নেতারা তাদের নিরস্ত করেন।
টানা ১০ ঘণ্টা ঘণ্টা ঘালানি গ্রিড স্টেশনের ফটকে প্রতিবাদী অবস্থান নেওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-ওয়াপদা) ডেপুটি কমিশনার ড. মোহাম্মদ ইহতিশামুল হক।
ইলেকট্রিসিটি অ্যাকশন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর লিখিতভাবে ওয়াপদার এই কর্মকর্তা প্রতিশ্রুতি দেন, মোহমান্দবাসীর এই সমস্যাটি তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা টেসকোর শীর্ষ নির্বাহীকে অবহিত করবেন এবং যতদ্রুত সম্ভব এটি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ জানাবেন।
ওয়াপদার ডেপুটি কমিশনারের এই প্রতিশ্রুতির পর জনগণ তাদের প্রতিবাদী ঘেরাও অবস্থান থেকে সরে আসেন।
বছরের পর বছর ধরে লোডশেডিংয়ের সমস্যায় ভুগছে পাকিস্তান। বিশেষ করে দেশের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে দিনে দু-একবার লোডশেডিং অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছিল, জনগণ এই সংকটের সঙ্গে একভাবে মানিয়েও নিয়েছিলেন।
কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর অপব্যয়, দুর্নীতি, উদাসীনতার জেরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকার পর গত এক বছর ধরে পাকিস্তানজুড়ে দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে লোডশেডিং। রাজধানী ইসলামাবাদ ও করাচি, লাহোর, কোয়েটার মত প্রাদেশিক রাজধানী শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
এসএমডব্লিউ